অনলাইন ডেস্কঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর দেশের অন্যতম এই উচ্চ বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠা হয়।।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার তার বাণীতে জানিয়েছেন, ‘সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ৫৮ বছর পার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাব। আমার সুদক্ষ সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি আমার কাঁধে দিয়েছেন, তা সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। আর এ পথচলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একটি পরিবারের মতো এগিয়ে যেতে চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়টি মহান মুক্তিযুদ্ধের মাত্র ৫ বছর আগে চালু হওয়ায় ৬৯ গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, ১২ জন শিক্ষার্থী, ও তিনজন কর্মকর্তা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী দপ্তরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেনকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ মুখে জিরো পয়েন্ট চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ স্মরণ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তিনটি জাদুঘর। যে জাদুঘরগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। ১৯৭৩ সালে মধ্যযুগের চারটি কামান নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। জাদুঘর ভবনটি পাঁচটি গ্যালারিতে বিভক্ত। যেখানে রয়েছে: প্রাগৈতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গ্যালারি, ভাস্কর্য গ্যালারি, ইসলামী আর্ট গ্যালারি, লোকশিল্প গ্যালারি এবং সমসায়িক আর্ট গ্যালারি। জাদুঘরটি সকল খোলার দিনে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
আর প্রাণিবিদ্যা জাদুঘরটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পাঠক্রমের সমর্থনে সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থাপিত হয়। জাদুঘরে প্রায়ই ৫৪০টি নমুনা সংরক্ষিত রয়েছে।
সর্বশেষ সমুদ্রসম্পদ জাদুঘরটি গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের একটি কক্ষে। এখানে হাঙ্গর, বৈদ্যুতিক মাছ, অক্টোপাস, শামুক, বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ ৫৫০টির মতো সামুদ্রিকপ্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে ৫টি স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে স্থাপন করা হয়। ১৯৮৫ সালে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভটি এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল কর্মের স্মৃতিকাগার হিসেবে ভাবা হয়।
ষাটের দশকে তিনটি স্তম্ভের আদলে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সেটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভের বিপরীত পাশে বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৯৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশের পথেই স্থাপন করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ স্মরণ। স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন, শিক্ষক, ১১ জন ছাত্র এবং তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বমোট ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগ আর বিরত্বের স্মৃতিস্বরূপ ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনে স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যুরাল ভাস্কর্যটির অবস্থান। খ্যাতিমান শিল্পী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক মর্তুজা বসিরের একক প্রচেষ্টা এটি নির্মিত হয়। ভাস্কর্যটির ৪টি পাখির প্রতীকী নির্মাণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালির ৬ দফা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্রমধারা এবং পাখির ডানায় ২১টি পাথরের টুকরায় লিপিবদ্ধ হয়েছে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি।
বুদ্ধিজীবী চত্বরে নির্মিত জয় বাংলা ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয় ২০১৮ সালে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ভাস্কর্যের দুটি স্তরের, উপরের অংশে রয়েছে চামড়া সংযুক্ত তিনজন সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা অবয়ব; যাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। নিচের অংশে ব্যবহৃত ২০টি মানব অবয়বের মধ্যে রয়েছে দুইজন পাহাড়ি-বাঙালির অবয়ব, যাদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ও বাঙালিদের অংশগ্রহণ তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও বন্যপ্রাণী। দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফরেস্ট্রি, সেন্ট্রাল ফিল্ড, ঝুলন্ত সেতু, কলা অনুষদের পেছনের ঝর্ণা, প্যাগোডা, টেলিটক হিল, হতাশার মোর, চালন্ত গিরিপথ।
তথ্যসূত্র: সংগৃহীত