অনলাইন ডেস্ক
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের আরো অবনতি হলো উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডার। সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন থেকে দেশে ফেরার পরই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সংক্রান্ত আলোচনা স্থগিত করা হয়। সেই সঙ্গে বাতিল করা হয় কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী মেরি এনজির অক্টোবরের ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য মিশন। এর মধ্যেই কানাডায় এক মন্দিরে শিখ নেতা নিহত হওয়ার জের ধরে দেশটি থেকে ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত কূটনীতিক ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর অ্যাজেন্ট বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে আরো অবনতি হলো। কানাডা শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যায় ভারতের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়ে তদন্ত করবে বলে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রুডো সোমবার রাতে পার্লামেন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “কানাডার মাটিতে কানাডার কোনো নাগরিককে হত্যায় কোনো বিদেশি সরকারের সম্পৃক্ততা অগ্রহণযোগ্য এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।”
তিনি বলেন, “কানাডার নিরাপত্তা সংস্থাগুলো চলতি বছরের জুনে শিখ-কানাডিয়ান নেতা নিহতের সাথে ভারত সরকারের অ্যাজেন্টদের সম্পৃক্ততার নিয়ে তদন্ত করছে।”
হরদীপ সিং নিজ্জর ১৮ জুন সারের একটি শিখ মন্দিরে গুলিতে নিহত হন। ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের ওই ঘটনায় ব্যাপক প্রশ্ন ও নিন্দার সৃষ্টি হয়।
এদিকে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলিনি জলি সোমবার রাতে বলেছেন, ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কানাডা সরকার এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কৃত ওই কূটনীতিক কানাডায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর প্রধান বলে জানা গেছে।
তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
গ্লোব অ্যান্ড মেইল পত্রিকায় প্রথমে প্রকাশিত হয় যে কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের কাছে নিজ্জরের হত্যায় ভারত জড়িত বলে সম্ভাব্য তথ্য রয়েছে।
পত্রিকাটি জানায়, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিজ্জরকে ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচনা করতো।
কানাডার পত্রিকাটি জানায়, ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থা এনআইএ অভিযোগ করেছে, ২০২২ সালে পাঞ্জাবে এক হিন্দু পুরোহিত হত্যায় নিজ্জর জড়িত। তাকে গ্রেফতারের তথ্য দিতে পারলে ১৬,২০০ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছিল। ভারত ও কানাডার মধ্যে সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের মধ্যে সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বক্তব্য রাখেন। বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, নয়া দিল্লিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ট্রুডোর সাথে আলোচনার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কানাডায় শিখ বিক্ষোভ নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তারা বিচ্ছিন্নতা উস্কে দিচ্ছে, ভারতীয় কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ছড়াচ্ছে, কূটনৈতিক এলাকার ক্ষতি করছে, কানাডায় ভারতীয় সম্প্রদায়ের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।”
এটিকে কানাডার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো উল্লেখ করে ভারতের ব্যাপক সমালোচনা করে উত্তর আমেরিকার দেশটি। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সূত্র: সিএনএন, এপি, হিন্দুস্তান টাইমস