উৎপল বড়ুয়া
চট্টগ্রামের নন্দনকাননস্থ দেড় শতাব্দীর ইতিহাস সমৃদ্ধ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর পীঠস্থান ঐতিহাসিক " চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার"- কে কেন্দ্র করে বৌদ্ধ সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজমান ছিল -- যা বড়ুয়া সমাজের মধ্যেই সীমিত ছিল। কিন্তু গত ৮ মার্চ তা বিশ্বায়নে রূপ নিল, যেটা সম্পূর্ণভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও বেদনাদায়ক। সদ্য একুশে পদকপ্রাপ্ত, বহুগুণে গুণান্বিত, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংঘিক ব্যক্তিত্ব ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপক ড: জিনবোধি ভিক্ষুর উপর অযাচিত মানহানিকর হামলা এবং ঘটনা প্রবাহে মর্মাহত জনগোষ্ঠীর সোশ্যাল মিডিয়ায় ইচ্ছেমত অপভাষার ব্যবহার ও অসুন্দর স্লোগানের ফলে রীতিমত মহাকারুণিক বুদ্ধের শান্তির বাণী যেন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, হয়েছে বুদ্ধের দর্শন অপমানিত ও পদদলিত।
সর্বোপরি অবচেতনভাবে কুপমণ্ডুকতায় আচ্ছন্ন হয়ে যেন অকুশল কর্মের ষোলকলাই পূর্ণ হয়েছে। কারো কাছে যেন বুদ্ধধর্মের মূল ভিত্তি অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী, করুণার কোন গুরুত্বই নেই। ফলস্বরূপ দুই পক্ষের আইনিঝামেলা নবরূপ নিতে চলেছে। কিছুটা আশংকা, দূ:শ্চিন্তা বিরাজমান হতে চলেছে অনেকের মাঝে। নিজেদের মাঝে এহেন বিভেদ যেন এক অশনিসংকেত-- যা যুগে-যুগে প্রমাণিত।
এহেন পরিস্থিতিতে অদূর ভবিষ্যতে আরো অকল্যাণকর রুপের লাগাম টেনে ধরার জন্য কি বৌদ্ধ সমাজের সূর্যসন্তান যাঁরা দেশের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন স্থলে অধিষ্ঠিত, যাঁরা সভ্য সমাজের অগ্রগণ্য আলোর দিশারি-- তাঁদের কি কোনকিছুই করার নেই! তাঁরা কি পারেনা নিজেরা একত্রিত হয়ে, সকলকে একত্রিত করে একটা সম্মানজনক সমাধানে আসতে! না- কি সময় অনেক গড়িয়ে গেছে, একটু ভাবা কি যায়না! অনেকে হয়তো ভাবছেন, কিছুদিন পর অটোমেটিক্যালি সব ঠিক হয়ে যাবে,বৃহত্তর সমাজে এর প্রভাব তেমন পড়বেনা--- আসলেই কি তাই? মনো রেষারেষির প্রভাবটা কি দীর্ঘদিন থাকবেনা! এভাবেইতো সম্ভবত ছোট-ছোট স্ফুলিঙ্গ বড় কিছুর জন্ম দেয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, তাই না?