বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) দীর্ঘ ১৫ বছরের একটানা লোকসান কাটিয়ে উঠে ২০২১-২২ অর্থবছরে লাভ জনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘুরে দাঁড়াল। ২০০৭ -০৮ অর্থ বছরে বিটিসিএল এর লোকসান ছিল প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। তার আগে এটি ছিলে প্রায় পাঁচ শ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরেও বিটিসিএলের লোকসান ছিল ২৪৭ কোটি টাকা। অব্যাহত এই লোকসান কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এ বছর লাভ করেছে ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় টেলিযোগাযোগ ভবনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারকে এই তথ্য জানানো হয়। বিটিসিএল বোর্ড চেয়ারম্যান ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান এবং বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিনসহ বোর্ডের সদস্যগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বিটিসিএলের এই অর্জনের নেপথ্য বিভিন্ন কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, বিটিসিএলকে প্রতিযোগিতার জায়গায় উপনীত করতে নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সবকিছুই আমরা সফলভাবে করেছি। তিনি দেশব্যাপী বিটিসিএলের অবকাঠামোসহ বিশাল স্থাবর সম্পদকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে বিটিসিএল শিগগিরই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলে মন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডাক অধিদপ্তরসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত সকল প্রতিষ্ঠান বিটিসিএলের মতোই ঘুরে দাঁড়াবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ কেবল বাণিজ্য করা নয় জনগণকে সেবা দেওয়া এর মূল লক্ষ্য। বিটিসিএল লাভও করছে সেবাও দিচ্ছে-এটি অনন্য। স্বাধীনতার পর বেসরকারি খাত বলতে কিছুই ছিল না। এমন কী দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান বলতে কিছুই ছিল না। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া শিল্প কল কারখানাকে সেক্টর করপোরেশন বানিয়ে রক্ষা করেন। এখন সকল খাতই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত। সরকারি খাতকে তাই বেসরকারি খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অনেক দূর এগিয়েছে। তার বিনিয়োগ বান্ধব নীতির ফলে প্রতিটি সেক্টরে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। দেশে আজ শিল্প বাণিজ্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সেবা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ করেন ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত। তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাত পাশাপাশি থাকবে এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা টিকে থাকবে। কোভিডকালে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদান, ৪১৮টি ভিডিও কনফারেন্স এবং ৫৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানের বিষয়টি তুলে ধরেন মন্ত্রী। লোকসানি প্রতিষ্ঠান থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিসিএল ঘুরে দাঁড়ানোতে মন্ত্রী গভীর সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও বাস্তবায়নসহ এই প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার পেছনে অনেকগুলো বিষয় জড়িয়ে আছে। আশা করছি আগামী দিনগুলোতে বিটিসিএল লাভজনক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। কৃতিত্বের জন্য বিটিসিএল বোর্ড চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তথ্যসূত্র: দেশ রূপান্তর