আজ ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

বান্দরবানে এবারও হচ্ছে না বোমাং রাজপুণ্যাহ উৎসব


তৌহিদুল ইসলাম বাবলুঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে এবারও হচ্ছে না ঐতিহ্যবাহী বোমাং রাজপুণ্যাহ উৎসব। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণ আর ২০২২ সালে অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে রাজপুণ্যাহর আয়োজন বন্ধ ছিল । এবার জাতীয় নির্বাচন, হরতাল ও অবরোধের কারণে ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বোমাং রাজা।

বর্তমান বোমাং রাজা উচ প্রু চৌধুরীর প্রধান সহকারী অংজাই খেয়াং জানান, মৌজা হেডম্যান ও পাড়া কারবারিদের এ সংক্রান্ত পত্র দিয়ে রাজপুণ্যাহ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারসহ চতুর্থ বারের মতো ১৪৬তম রাজপুণ্যাহ উৎসব থেকে বঞ্চিত হলেন পাহাড়ে বসবাসকারী ১১ ভাষাভাষী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও বাঙালিরা। রাজপুণ্যাহ না হওয়ার খবরে হতাশ হয়েছেন পাহাড়ের জনগণ। প্রতি বছর রাজকর আদায়ের উৎসব রাজপুণ্যাহ ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে আয়োজন করা হতো। বোমাং সার্কেলের ১০৯টি মৌজার প্রজাদের কাছ থেকে পাহাড়ের জুম চাষের বার্ষিক খাজনা আদায়ের জন্য প্রতি বছর রাজপুণ্যাহ মেলার আয়োজন করা হয়। বান্দরবান বোমাং সার্কেলে তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থানীয় রাজার মাঠে এ মেলা চলে।

আরও পড়ুন বান্দরবানে অপরাধ দমনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়

রাজপুণ্যাহ বোমাং রাজপরিবারের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। রাজায়-প্রজায় ভাবের আদানপ্রদানের অন্যতম মাধ্যম, শুভেচ্ছা বিনিময়ের মিলনক্ষেত্র এ ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ। এতে আয়োজন করা হয় লোকজ, কৃষি ও বিভিন্ন পণ্য বিক্রির মেলা। প্রজাদের জন্য রাজা উচপ্রম্ন চোধুরী আয়োজন করেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রা ও নাটকের। প্রজাদের সমস্যা সম্ভাবনা, সামাজিক অবস্থান, নিজস্ব সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা ও সেমিনার হয় এ রাজপুণ্যায় । দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর হাজারো মানুষ বোমাং রাজাকে একনজর দেখতে রাজদরবারে এসে ভিড় জমান। কথিত আছে, এ উৎসবে রাজাকে এক নজর দেখলে প্রজাদের আগামী দিনগুলো আনন্দ-উল্লাসে কাটবে। রাজপুণ্যাহ হলো বান্দরবান জেলার প্রধান সামাজিক উৎসব।

এবার ১৪৬তম রাজপুণ্যাহ হওয়ার কথা ছিল। বর্তমান বোমাং রাজা উচ প্রু চৌধুরী ১৭তম বোমাং রাজা। ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টি হয় । ১৮৭৩ সালে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় রাজাদের সুনির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দেয়। ব্রিটিশ শাসনামলে তিনটি সার্কেলে ভাগ করে জুমের খাজনা আদায় করা হতো। এর মধ্যে বান্দরবানে বোমাং সার্কেল, রাঙ্গামাটিতে চাকমা সার্কেল এবং খাগড়াছড়িতে মং সার্কেল প্রচলিত আছে। ১৯০০ সালের আইন অনুযায়ী বোমাং রাজা তার সার্কেলের রাজস্ব সংগ্রাহক ও সমাজপতি হিসেবে তার অধীনস্থ মৌজা হেডম্যানদের মাধ্যমে কর ও রাজস্ব আদায় করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর