অনলাইন ডেস্কঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে অনেক পণ্যই ভারত থেকে আসে। ভারতের সাথে আমাদের হাজার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত এবং কিছু সীমান্ত বাণিজ্যও হয় বৈধভাবে। আসলে ভারতীয় পণ্যবর্জনের ডাক দিয়ে দেশের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলা ও দ্রব্যমূল্য বাড়ানোই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য। এতে দেশে যাতে জনগণের ভোগান্তি হয় এবং পণ্যেরমূল্য বাড়ে।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ভারত থেকে আসা পেয়াঁজ খাবেন, আপনাদের নেত্রী ভারত থেকে আসা শাড়ি পরিধান করবেন, আপনাদের নেত্রী যেগুলো মাঠে গলা ফাটায়, তারাও আবার ভারতীয় শাড়ি পড়বেন, ভারত থেকে আসা গরুর মাংস দিয়ে আপনারা ইফতার করবেন সেহেরি খাবেন, কদিন আগে ওদের নেতা ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন, ভারতে চিকিৎসা নিতে যাবেন, আবার আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিবেন - এগুলো হিপোক্রেসি ছাড়া অন্য কোনকিছু নয়। বিএনপির আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে বাজার অস্থিতিশীল করে পণ্যেও মূল্য বাড়ানো।’
শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম জেলায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যশেষে বিএনপিসহ কয়েকটি দল ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক সম্পর্কে সাংবাদিকরা সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের যারা ডাক দিয়েছে, তাদের সাথে শামিল হয়ে রিজভী সাহেব নিজের পরনের শালটিও জ্বালিয়ে দিয়েছে। আসলে শালটি ভারত থেকে কিনেছিল, নাকি বঙ্গবাজার থেকে কিনেছে আমি জানি না।’
সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে কি ধরণের ভূমিকা রাখা হচ্ছে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গতবার যখন এমভি জাহান মনি হাইজ্যাক হয়েছিল তাদেরকে মুক্ত করতে ১শ’ দিন সময় লেগেছিল। এখন যতদ্রুত সম্ভব তাদেরকে মুক্ত করার চেষ্টাই আমরা করছি। এখানে অবস্থানকারী নাবিক এবং জাহাজের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেভাবেই আমরা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।
আরও পড়ুন বাংলাদেশে ৩ দিনের সফরে সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া, অভ্যর্থনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
তিনি বলেন, ‘জাহাজের মধ্যে কয়লা আছে, কয়লা একটি দাহ্য পদার্থ। সুতরাং এমন কিছু করা যাবে না যাতে করে দাহ্য পদার্থ হুমকির সম্মুখীন হয়, জাহাজের ক্ষতি হয়। সেভাবেই আমরা এগুচ্ছি এবং যারা জাহাজটি হাইজ্যাক করেছে, তারা ইতিমধ্যে মালিক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এ ব্যাপারে আমাদেরকে সহযোগিতা করছে এবং আপনারা নাবিকদের পরিবারের সাথে কথা বললেও জানতে পারবেন তারাও অনেকটা আশ্বস্থ। আশা করছি, আমরা সহসা নাবিকদেরকে উদ্ধার করতে পারব।’
চট্টগ্রামের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় জলাবদ্ধতা প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সমন্বয়ের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি জানিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, প্রকল্প শেষ হতে আরো আড়াই বছর বাকি আছে। এই আড়াই বছর সময়ের মধ্যে জনগণের যাতে কোন ভোগান্তি না হয় সেটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। একইসাথে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার পর যাতে নিয়মিতভাবে মেনটেইনেন্স করা হয় সেটিকেও গুরুত্ব দিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, আজকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বে-টার্মিনালের জন্য ইতিমধ্যে পাঁচশ’ একর জায়গা প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছেন। আরো তিনশ’ একরের বেশি জায়গা তারা পাবে, সেটির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছে। ইতিমধ্যেই ডিপি ওর্য়াল্ড এবং সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির সাথে চট্টগ্রাম বন্দর এমওইউ স¦াক্ষর করেছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে তিনটি ভাগে কাজ হবে। একটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে, আরেকটি সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে, আরেকটি ডিপি ওয়ার্ল্ড করবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানও সেখানে যুক্ত হচ্ছে। এটা একটি বড় অগ্রগতি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘বে-টার্মিনাল হলে সেটি চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে আরো বড় একটি নতুন বন্দর হবে। যেটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সম্পদ হবে এবং একইসাথে এই বে-টার্মিনাল দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহের পণ্য সরবরাহ আমরা করতে পারব। এছাড়া চট্টগ্রামে পাহাড়কাটা বন্ধ ও যানজট নিরসনসহ সার্বিক অনেক বিষয় নিয়ে সমন্বয় সভায় আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, প্রতি তিনমাস পরপর আমরা এরকম সমন্বয় সভা করব।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, এম এ ছালাম, এম এ মোতালেব সিআইপি, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, ডিআইজি নুরে আলম মিনা, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।