অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু হওয়ায় বিএনপির জন্য চূড়ান্ত আন্দোলনের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এই প্রেক্ষাপটে চলমান আন্দোলন আরো জোরদার করার বিষয়ে দলের ভেতরে আলোচনা হচ্ছে। দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৫ অক্টোবর চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আরো শক্তভাবে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। এ যাত্রায় ভিসানীতি প্রয়োগের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। তবে ভিসানীতির প্রয়োগে বিরোধী দলের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত থাকার বিষয়টি নিয়ে দলের নেতারা তেমন বিচলিত নন বলে জানান। নেতারা বলছেন, বিরোধী দল মানে শুধু বিএনপি নয়। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা না পেয়ে হতাশ ছিলেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। কয়েক দিন আগেও পরিস্থিতি উত্তরণের পথ খুঁজছিল দলটি।
ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু হওয়ায় এখন প্রেক্ষাপট বদলাতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। দলের শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত তিনজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা কালের কণ্ঠকে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ, ফটোসেশনের ছবি ও সেলফি ভাইরালের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রয়োগের পদক্ষেপ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে হতাশা তৈরি করবে। গত কয়েক দিন ফেসবুকে সরকারি দলের নেতারা যেভাবে সরব ছিলেন, গতকাল থেকে তেমন দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কারণে সরকারি দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, প্রশাসনসহ সর্বস্তরে এক ধরনের টানাপড়েন শুরু হবে। এ রকম প্রেক্ষাপট চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে বিএনপি। এখন কিভাবে আন্দোলনে সফলতা পাওয়া যায় তা নিয়ে দলের ভেতর আলোচনা শুরু হয়েছে। আজ সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানান। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলেন, ভিসানীতি কার্যকর হওয়ার পর সরকারের মনোভাব কেমন হয় তা-ও দেখার বিষয়।
চলমান আন্দোলন আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এর পরই আসবে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল। ঢাকা সফরে তাদের মনোভাব বোঝার বিষয়ও আছে। এসব বিষয় বুঝে অক্টোবরের মাঝামাঝি চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ ধাপের কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে যে ধরনের রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রেক্ষাপটে অক্টোবরের মাঝামাঝি সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করাই এখন বিএনপির লক্ষ্য।
দলের কর্মকৌশল তৈরিতে ভূমিকা রাখেন, এমন একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার অক্টোবরের শেষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। অক্টোবরের মাঝামাঝি ঢাকায় মহাসমাবেশ, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকা ঘেরাও এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। সম্প্রতি ভৈরব থেকে সিলেট রোড মার্চ শুরুর আগে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রয়োজনে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভিসানীতি প্রয়োগ হওয়ার জন্য সরকার দায়ী। যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র রক্ষায় অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে যেভাবে ভিসানীতি প্রয়োগ করে থাকে, সেভাবে বাংলাদেশেও করেছে। বৃহৎ গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভিসানীতি প্রয়োগের পর সরকার কী করবে তা তাদের ওপর নির্ভর করছে। আমরা আমাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আন্দোলন আরো তীব্র করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব।’
বিএনপির ঝুঁকি কম দেখছেন নেতারা
যুক্তরাষ্ট্র প্রথমেই যাঁদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করছে তাঁদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত আছেন। তবে বিএনপি নেতারা নিজেদের ঝুঁকিতে রাখতে চাচ্ছেন না। তাঁদের বিশ্লেষণ, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকে তাদের ওপর এই ভীতি বিশেষভাবে প্রযোজ্য হওয়ার কথা। বাংলাদেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কারা বাধা তা দেশি-বিদেশি সবারই জানা।
তাঁদের মতে, বিএনপি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে। বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো সহিংস আন্দোলনে যায়নি। বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির ওপর সহিংসতা হয়েছে। তাঁরা আরো বলেন, আর বিরোধী দল বলতে শুধু বিএনপিকে বোঝায় না। জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ আরো অনেক রাজনৈতিক বিরোধী দল আছে। কূটনীতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রাখেন এমন একজন তরুণ বিএনপি নেতা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের বাধা হিসেবে সরকারি দল ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিএনপি যে অভিযোগ করে আসছিল তা সত্য বলে মানছে যুক্তরাষ্ট্র। ভিসানীতির প্রয়োগ এমনটাই বলছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো দেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে তখন তা দিনে দিনে কঠোর হয়। তাই ভিসানীতি প্রয়োগই শেষ কথা নয়। এরপর আরো বড় ধরনের পদক্ষেপও আসতে পারে। তখন দেশে আরো বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে। দুঃখজনক বিষয় হলো, সরকারের যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার মনোভাব দেশের মানুষকে ভোগাতে শুরু করেছে।
Leave a Reply