সীতাকুণ্ডের বোয়ালিয়া মৌজায় এলপিজি স্টোরেজ ও বটলিং প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাগজপত্রের জটিলতা চুকিয়ে এ প্রকল্পের ভূমির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন মিললে প্রকল্পের সরেজমিন কার্যক্রম শুরু করবে বিপিসি। জ্বালানি বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলপি গ্যাসের বিদ্যমান বাজার বিবেচনায় নিয়ে বিপিসি এ ধরনের প্রকল্প পরিকল্পনা করেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্রাহকের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস পৌঁছানো সম্ভব হবে। বর্তমানে সরকারি কোম্পানি এলপিজিএল বাজারে সাড়ে ১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছে ৫৯১ টাকায় (বিইআরসি নির্ধারিত)। বছরে সাড়ে ১২ হাজার টন এলপিজি সরবরাহের পুরোটাই আসছে স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে। যে কারণে এর মূল্য বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা এলপি গ্যাসের তুলনায় অর্ধেকের বেশি সাশ্রয়ী। অন্যদিকে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সরবরাহকৃত এলপি গ্যাসের মূল্য এখন ১ হাজার ২৫১ টাকা (নভেম্বরের জন্য)। সৌদি আরামকো কোম্পানি সিপি অনুযায়ী কমিশন নির্ধারিত দামে বাজারে এলপি গ্যাস সরবরাহ করছে বেসরকারি অপারেটররা।
বিপিসির পরিকল্পনানুযায়ী, প্রকল্পে পুরো অর্থায়ন করবে বিপিসি। এটি বাস্তবায়ন করবে সংস্থাটির সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল)। প্রায় ৪০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে বাইরে থেকে এলপিজি’র কাঁচামাল আমদানি করে তা বটলিং করে জ্বালানি তেল বিপণনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত তিন প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে বাজারজাত করা হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) প্রাইসিং ফর্মুলা অনুযায়ী নির্ধারিত বাজারে বিক্রি হবে।
তবে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিপিসি’র এ ধরনের পরিকল্পনা হঠকারী বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টদের অনেকেই। তাদের অভিযোগ, এর আগে বিপিসি আরো বেশ কয়েকটি বড় পরিকল্পনা নিয়েছিলো, যেগুলোর এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতি নেই। বছরে ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিশোধনক্ষমতার ইস্টার্ন রিফাইনারি বা ইআরএল—২ ইউনিট নির্মাণ পরিকল্পনা করেছিল সরকার। ২০১০ সালে নেয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল বিপিসি’র। গত ১২ বছরেও এ প্রকল্পের সন্তোষজনক কোনো অগ্রগতি হয়নি। এছাড়া মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতার এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের দায়িত্ব বিপিসি’র হাতে। আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে শুরু হলেও এ প্রকল্পের মাঠপর্যায়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। এ প্রকল্প আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় বাজারে এলপিজির চাহিদার প্রায় পুরোটা সরবরাহ করছে বেসরকারি এলপিজি অপারেটররা। ছোট বাজারে দুই ডজনেরও বেশিসংখ্যক কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করায় এরই মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বেশ কয়েকটি কোম্পানি এ খাত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।
এলপিজি অপারেটরদের সংগঠন লোয়াবের তথ্য (জুন ২০২১) অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজি খাতের বাজার এখন ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। ২৭টি প্রতিষ্ঠান এ খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এসব অপারেটরের বর্তমান এলপিজি মজুদ সক্ষমতা এক লাখ টন। গত পাঁচ বছরে এলপি গ্যাস জনপ্রিয় ও চাহিদা বাড়ায় এ খাতে বার্ষিক চাহিদা এখন প্রায় ১২ লাখ টন। ৯৮ শতাংশ এলপি গ্যাস সরবরাহ করছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। বাকি ২ শতাংশ সরকারি এলপি গ্যাস কোম্পানি সরবরাহ করছে। বর্কমানে দেশের বাজারে এলপি গ্যাস সরবরাহে শীর্ষস্থান দখলে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের। কোম্পানিটির মার্কেট শেয়ার বর্তমানে ২০ শতাংশ।
তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা