অনলাইন ডেস্কঃ হজ ইসলামের মৌলিক পাঁচ ভিত্তির অন্যতম। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর হজ ফরজ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে (সুরা আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)।’
হজের প্রকারভেদ
সম্পাদন পদ্ধতি অনুসারে হজ তিন প্রকার: (১) ইফরাদ, (২) কিরান ও (৩) তামাত্তু। শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পন্ন করলে একে ‘ইফরাদ হজ’ বা একক হজ বলা হয়। ইফরাদ হজ পালনের জন্য ঢাকা থেকে শুধু হজের ইহরামের নিয়ত করে মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ ও সায়ি করে ইহরাম না ছেড়ে ১০ জিলহজ হজ সম্পাদন হওয়ার পর ইহরাম ছাড়তে হবে।
একই ইহরামে হজ ও ওমরাহ একত্রে সম্পন্ন করলে তাকে ‘কিরান হজ’ বা যৌথ হজ বলা হয়। একত্রে ইহরামের নিয়ত করে মক্কায় পৌঁছার পর প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ি করে ইহরাম না ছেড়ে সেই ইহরামেই হজ সম্পাদন করে ১০ জিলহজ ইহরাম ছাড়তে হবে।
একই সফরে প্রথমে ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে, তা সম্পন্নপূর্বক হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে তা সম্পাদন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বা সুবিধাজনক হজ বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ করে থাকেন। তামাত্তু হজের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে শুধু ওমরাহর ইহরামের নিয়ত করে মক্কা শরিফ পৌঁছে তাওয়াফ ও সায়ি করে চুল কেটে বা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম সমাপ্ত করতে হবে। এরপর ৭ জিলহজ হজের জন্য নতুন করে ইহরামের নিয়ত করে ১০ জিলহজ তা সমাপ্ত করতে হবে।
আরও পড়ুন ১১ মে’র মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে হজ ভিসার কার্যক্রম
কিরান ও তামাত্তু হজে দমে শোকর বা কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। অন্যথা ১০টি রোজা পালন করতে হবে, এর মধ্যে অন্তত তিনটি রাখতে হবে হজকালীন মক্কায়, তবে হজের বা আরাফাতের দিন ও কুরবানির ঈদের দিন ব্যতীত অন্য দিনগুলোতে।
হজের ফরজসমূহ
হজের ফরজ তিনটি: ১. ইরামের নিয়ত বা ইচ্ছা করা, ২. অকুফে আরাফা করা, ৯ জিলহজ জোহর থেকে ১০ জিলহজ ফজরের আগপর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা, ৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা, ১০ জিলহজ ভোর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবাঘর তাওয়াফ বা সাতবার প্রদক্ষিণ করা।
হজের ওয়াজিবসমূহ
হজের ওয়াজিব সাতটি: ১. আরাফা থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামের স্থানে ১০ জিলহজ ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কিছু সময় অবস্থান করা, ২. সাফা ও মারওয়া সায়ি করা বা দৌড়ানো, ৩. রমিয়ে জিমার বা ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ জামারায় শয়তানকে পাথর মারা, ৪. তামাত্তু ও কিরান হজে দমে শোকর বা কোরবানি করা, ৫. মাথার চুল মুড়িয়ে বা কেটে ইহরাম সমাপ্ত করা, ৬. বিদায়ী তাওয়াফ করা; ৭. মদিনা শরিফ রওজাতুন নবী (সা.) জিয়ারত করা। (আসান ফিকাহ, ইউসুফ ইসলাহি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২৫১)
হজের সুন্নতসমূহ
হজের সুন্নত ১০টি: ১. তাওয়াফে কুদুম বা প্রথম তাওয়াফ করা (ইফরাদ ও কিরান হজকারীর জন্য)। ২. তাওয়াফের সময় রমল করা (প্রথম তিন চক্কর সৈনিকের মতো বীরদর্পে চলা)। ৩. খলিফা অথবা তাঁর প্রতিনিধি তিন দিন তিন স্থানে খুতবা প্রদান করা বা ভাষণ দেওয়া। (৭ জিলহজ কাবা শরিফের হারাম শরিফে, ৯ জিলহজ আরাফায় মসজিদে নামিরাতে, ১১ জিলহজ মিনাতে।) ৪. আট জিলহজ মক্কা শরিফ থেকে মিনাতে গিয়ে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে সেখানে অবস্থান করা। ৫. ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হওয়া। ৬. অকুফে আরাফা বা আরাফাতে অবস্থানের জন্য সকালে (দুপুরের পূর্বে) গোসল করা। ৭. ৯ জিলহজ আরাফাতে অবস্থান করে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার দিকে রওনা করা। ৯. ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনাতে রাত যাপন করা। ১০. মিনা থেকে মক্কা শরিফ প্রত্যাবর্তনের সময় ‘মুহাচ্ছার’ নামের জায়গায় কিছু সময় অবস্থান করা।
লেখক: মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো