নিলামে ২৫ দশমিক ৩১ কেজি অর্থাৎ ২ হাজার ১৭০ ভরি স্বর্ণ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এ খবর জানায়। এর আগেও বিভিন্ন সময় জব্দ করা স্বর্ণ নিলামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা এ ধরনের নিলামে অংশ নিতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ১৪ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে দুই হাজার টাকা জমা (অফেরতযোগ্য) দিয়ে শিডিউল কেনা যাবে। এ সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। পরে যাচাই-বাছাই করে নিলামের জন্য যোগ্যদের একটি তালিকা হবে। তাদেরকে স্বর্ণের বার, অলংকার, টুকরো বা পাতগুলো দেখানো হবে।
নির্ধারিত দিনে উপস্থিত হয়ে স্বর্ণ কতটুকু খাঁটি, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একজন স্বর্ণকার বা পরীক্ষক যেতে পারবেন। দেখার তৃতীয় দিনে দরপত্র জমা দিতে হবে। সঙ্গে দরপত্রে উদ্ধৃত মূল্যের আড়াই শতাংশ অর্থ বায়না বা নিরাপত্তা জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে। পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ ক্রয়ের কার্যাদেশ দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সব অর্থ জমা দিতে হবে। অর্থ পরিশোধ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বর্ণ নিতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংক দরদাতা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জামানত বাজেয়াপ্ত ও প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করতে পারবে।
জানা গেছে, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ বা চোরাচালানের স্বর্ণ জব্দ করে। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জব্দ করা স্বর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা থাকে। মামলার রায় সরকারের পক্ষে হলে জব্দ সোনা নিলামে বিক্রি করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্থায়ী খাতে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি আর স্থায়ী খাতে রয়েছে ১৫৯ কেজি স্বর্ণ। এখন স্থায়ী খাত থেকে ২৫ কেজি স্বর্ণ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী নিলামে অংশ নিতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স; টিআইএন সনদ; মূসক নিবন্ধন; বিআইএন সনদ; সোনা ক্রয়, মজুত ও সরবরাহের লাইসেন্স; সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যপদ; আর্থিক সচ্ছলতার বিষয়ে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সনদ; আয়কর পরিশোধের হালনাগাদ সনদ; আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত লিমিটেড কোম্পানি হলে কোম্পানির নিবন্ধন সনদ; মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন ও পরিচালকদের হালনাগাদ তালিকা জমা দিতে হবে।
বর্তমানে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার মূল্য ৮০ হাজার ১৩২ টাকা। ২১ ক্যারেটের সোনা ৭৬ হাজার ৫১৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ৬৫ হাজার ৫৫২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ৫৪ হাজার ৩৫৪ টাকা। সুনির্দিষ্ট হিসাব না থাকলেও দেশে বছরে প্রায় ২০-৪০ টন সোনার চাহিদা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তার মাত্র ১০ শতাংশ চাহিদা পুরোনো অলংকার দিয়ে মেটানো হয়। তাই বৈধভাবে সোনার চাহিদা মেটাতে ও ব্যবসায় স্বচ্ছতা ফেরাতে ২০১৮ সালে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে সোনা আমদানির লাইসেন্স দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত সাড়ে চারশ’ থেকে ৫০০ কেজি সোনা আমদানি হয়েছে। ফলে এখনও চাহিদা পূরণ হচ্ছে অবৈধভাবে আসা সোনা দিয়ে।
Leave a Reply