মো: শোয়াইব, হাটহাজারী প্রতিনিধি
দক্ষিণপূর্ব এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় কওমি মাদ্রাসা আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ইন্তেকাল করেছেন ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শুক্রবার (২ জুন) দিবাগত রাত সোয়া ১ টার দেখে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।হাটহাজারী মাদ্রাসা সূত্রে এই আলেমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শনিবার (৩ জুন) মাগরিবের নামাজের পর মাদ্রাসার মাঠে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।তার জানাযার নামাজে ইমামতি করেন হেফাজত ইসলামের আমির আল্লাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী,পরে মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার ( ১ জুন) তার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে এম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থা অবনতি হওয়ায় রাতে থাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ১৬ মে আল্লামা ইয়াহিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে যান। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেন। জানা যায় আল্লামা মোঃ ইয়াহিয়া দীর্ঘদিন যাবত কোমরের ব্যথা,হাইপ্রেসার ও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। গত কয়েক মাস ধরে তিনি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সেখানে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলেন। আল্লামা ইয়াহিয়া হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসাবে ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে দীর্ঘদিন হেফাজতের কেন্দ্রীয় আমির শাহ আহমদ শফী হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার মহাপরিচালক ছিলেন। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হলে মাদ্রাসার প্রধান মুফতি আব্দুস সালামকে প্রদান করে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মুফতি আব্দুস সালামকে মহাপরিচালক ও আল্লামা ইয়াহিয়াকে সহকারি পরিচালক ঘোষণার পরপরই মুফতি আব্দুস সালাম অসুস্থ হয়ে পড়েন বৈঠকে।পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুফতি আব্দুস সালামের জানাজার পরপরই আল্লামা ইয়াহিয়া কে মহাপরিচালক ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য:-আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার অন্তর্গত আলমপুর গ্রামের কাজী সালেহ আহমদের বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতা কাজি আব্দুল আজিজ বিন চাঁদ মিয়া বিন আসমত আলী জমিদার বিন কাজী মোহাম্মদ সালেহ। তিনি শায়খুল মাশায়েখ হযরত আল্লামা শাহ্ জমির উদ্দিন (রহ.) এর মুরিদ ছিলেন।তার শিক্ষা জীবনে দশ বছর বয়সে হাটহাজারী মাদ্রাসা ফোরকানিয়া মক্তব বিভাগ থেকে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। অতঃপর ধারাবাহিক ভাবে পড়াশোনা অব্যাহত রেখে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে দাওরায়ে হাদিস সম্পূর্ণ করেন।
১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করার পর হাটহাজারীর অন্তর্গত গড়দুয়ারা মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন যা উক্ত মাদ্রাসায় দশ বছর ছিলেন।এরপর পার্শ্ববর্তী মাদার্শা মাদ্রাসায় তিন বছর শিক্ষকতা করেন।এরপর ইছাপুর ফয়জিয়া তাজবিদুল কোরআন মাদ্রাসায় ৬ বছর শিক্ষকতা করেন।এরপর ১৯৯১খ্রিস্টাব্দে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষক পদে যোগদান করেন।শিক্ষকতা জীবনে শুরু থেকে আজ অবধি তার মেধা,যোগ্যতা,অভিজ্ঞতা দিয়ে উর্দু খানা থেকে দাওরায়ে হাদিস ও তাফসির জামাত পর্যন্ত মানতেক,উলুমে হাদিস,উলুমে তাফসীর সহ বিভিন্ন কিতাব অধ্যাপনা করে আসছেন।
এছাড়াও এর আগে কয়েক যুগ ধরে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার হিসাব বিভাগ পরিচালনা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এসেছেন।পাশাপাশি আল্লামা ইয়াহিয়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে অসংখ্য কওমি মাদ্রাসার সূরা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।তিনি ঈমান আকিদাভিত্তিক সংগঠন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির,কওমি মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি,খতমে নবুওয়াত আন্দোলনের সভাপতি,আলহাইয়াতুল উলইয়া বোর্ডের সদস্য এবং বাংলাদেশ নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ডের চট্টগ্রাম এর চেয়ারম্যান ছিলেন।