স্পোর্টস ডেস্ককাগজে-কলমে ইংল্যান্ডের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে আফগানিস্তান। ২০১৯ বিশ্বকাপে এই আফগানদের বিপক্ষেই ৩৯৭ রানের পাহাড়সম স্কোর গড়েছিল ইংল্যান্ড। ম্যাচ জিতেছিল ১৫০ রানের ব্যবধানে। তুলোধুনো হওয়া রশিদ খান ৯ ওভারে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১১০ রান। সেই হারের প্রতিশোধই যেন নিল আফগানিস্তান। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ভারত বিশ্বকাপে হারাল ৬৯ রানের বড় ব্যবধানে।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করা আফগানিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভারের ১ বল বাকি থাকতে অলআউট হয় ২৮৪ রানে। ২৮৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা ইংল্যান্ড ২১৫ রানে অলআউট হয় ৫৭ বল বাকি থাকতেই।
বিশ্বকাপে ১৭টি ম্যাচ খেলে এই নিয়ে দ্বিতীয় জয় পেল আফগানরা। ইংল্যান্ডকে হারানোর আগে একমাত্র জয়টি এসেছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১৫ বিশ্বকাপে।
বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ড শুরুতেই ফজলহক ফারুকীর তোপে পড়ে। দলীয় ৩ রানের মাথায় জনি বেয়ারস্টোকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন ফারুকী। সপ্তম ওভারে দলের বড় ভরসা জো রুটকে হারায় দলটি। মুজিব উর রহমানের বলে সরাসরি বোল্ড হন রুট। ৩৩ রানে ২ উইকেট হারানো দলটির বিপদ বাড়ে ৬৮ রানের মাথায় আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ডেভিড মালান ফিরলে। এরপর জুটি বাধেন হ্যারি ব্রুক ও অধিনায়ক জস বাটলার।
দলীয় শতরান পূর্ণ হওয়ার আগেই চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে ফেরেন ইংলিশ অধিনায়ক। নাভিন উল হকের বলে সরাসরি বোল্ড হন এই ব্যাটার। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিয়াম লিভিংস্টোনও। বিধ্বংসী এই ব্যাটারকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন রশিদ খান। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি স্যাম কারেনও। ১৩৮ রানের মাথায় তাকে বিদায় করেন নবী। শুরুর দিকে উইকেট নেওয়ার পর আফগান শিবিরে শেষের দিকেও তোপ দাগেন মুজিব। ১৬০ রানে ক্রিস ওকসকে ফেরানোর পর ১৬৯ রানে ফেরান হাফ সেঞ্চুরি (৬৬) তুলে নেওয়া হ্যারি ব্রুককেও।
নবম উইকেটে অবশ্য ভালো জুটি গড়েন আদিল রশিদ এবং মার্ক উড। তাদের ২৯ রানের জুটি ভাঙেন রশিদ, আদিল রশিদকে ফিরিয়ে। ইংলিশদের গুঁড়িয়ে দেন সেই রশিদ খানই। শেষ পর্যন্ত ২১৫ রান করতে সক্ষম হয় দলটি।
এর আগে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ঝোড়ো সূচনা এনে দেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রাহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। একপাশে ইব্রাহিম রয়েসয়ে খেললেও ইংলিশ বোলারদের তুলোধুনো করতে থাকেন রাহমানুল্লাহ। দলের প্রথম অর্ধশতক পূর্ণ হয় মাত্র ৬ ওভার ৩ বলে। পাওয়ার প্লের দশ ওভারে আসে ৭৯ রান। এরই মধ্যে মাত্র ৩৩ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন রাহমানুল্লাহ।
আফগানিস্তান দলীয় শতরান পূর্ণ করে মাত্র ১২ ওভার ৪ বলে। প্রথম ১৬ ওভারেই দুই ওপেনার তুলে ফেলেন ১১১ রান। তবে ছন্দপতন ঘটে ১৭তম ওভারে। আদিল রশিদের করা সেই ওভারের চতুর্থ বলে রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৮ রান করা ইব্রাহিম। ওই ওভারে এক উইকেট হারানোর পর ১৯তম ওভারে হারায় আরও ২ উইকেট। আবারও সেই রশিদের আঘাত। এবার আফগানদের ওয়ান ডাউন ব্যাটার রহমতকে স্ট্যাম্পিং করে দেন জস বাটলার। তার পরের বলে ফিরে যান ঝড় তোলা রাহমানুল্লাহ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট হয়ে ফেরেন তিনি। তবে তার আগে ৫৭ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় করেন গুরুত্বপূর্ণ ৮০ রান।
১২২ রানে ৩ উইকেট হারানো চতুর্থ উইকেট হারায় ১৫২ রানে। ১৯ রান করে ফেরেন আজমাতুল্লাহ ওমারজাই। মাঝের ওভারগুলোতে দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি কোনো ব্যাটারই। ১৭৪ রানের মাথায় জো রুটের বলে বিদায় নেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি (১৪)। ১৯০ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে পথ দেখান ছয়ে নামা ইকরাম (৫৮), আটে নামা রশিদ খান (২৩) ও নয়ে নামা মুজিব (২৮)। তাদের লড়াকু ব্যাটিংয়েই শেষ পর্যন্ত ২৮৪ রান তুলতে সক্ষম হয় আফগানিস্তান।