বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির ক্রমবর্ধমান অর্থায়ন দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে মোট বকেয়া ১১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন। আজ মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবির সদর দপ্তরে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়ার সাথে অনুষ্ঠিত এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে আগামী পাঁচ বছরে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ও লক্ষ্যসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে ২০২১-২৫ মেয়াদে বাংলাদেশ- এডিবি কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হয়েছে। যার আওতায় আগামী পাঁচ বছরে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণের যোগান আসবে বলে আশা করছি।
কোভিড মহামারী মোকাবিলায় দ্রুততার সঙ্গে সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে আসার জন্য আ হ ম মুস্তফা কামাল এডিবির প্রেসিডেন্টের গতিশীল নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এডিবি এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য সংকট পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোকে দ্রুত টিকা ও ব্যয় সহায়তা দিয়ে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের মাইলফলক অর্জনে এডিবির ক্রমাগত সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ও এডিবির সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশ ও এডিবির জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ২০২৩ সাল আমাদের অংশীদারিত্বের ৫০তম বার্ষিকী। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ১৬৫ মিলিয়ন বাংলাদেশী নাগরিকের পক্ষ থেকে তিনি এডিবি প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফর এবং ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন করার আমন্ত্রণ জানান।
একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ থেকে এডিবির শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিশেষ করে ভাইস- প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করার অনুরোধ করেন।
অর্থমন্ত্রী জানান, তিনি বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্ষমতার সাথে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে চলেছে। বাংলাদেশ ৫১ বছরের যাত্রায় কখনো দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম ঋণ গ্রহণকারি দেশ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশর অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও অগ্রগতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল আর্থ-সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্ব সম্প্রদায়ের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারী এবং বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কারণে, খাদ্য, জ্বালানি, সার, এবং আর্থিক সংকট বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছে এবং সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এডিবি থেকে বাজেট সহায়তার পাশাপাশি নীতি ভিত্তিক ঋণের প্রয়োজন। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী এডিবির বিশেষ সহযোগিতা কামনা করেন এবং বাংলাদেশও এডিবি সদর দপ্তরের
সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশকে জলবায়ু অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সহযোগিতা প্রদানে এডিবি গতিশীল ভূমিকা পালন করবে। বৈঠকে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের সক্ষমতার একটি প্রতীক। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের বিশেষ প্রশংসা করেন। একইসাথে কোভিড মহামারীর কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত ও আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপ এবং টিকা কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, এবারের এডিবির বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে এডিবি শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।