অনলাইন ডেস্কঃ দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, বাঙালী মুসলমানদের নব জাগরণের অন্যতম অগ্রদূত আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার উদ্যোগে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে ‘মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি সাংবাদিক
এস.এম.জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে মুখ্য আলোচক ছিলেন, প্রবীণ সাংবাদিক নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিল নির্বাহী পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, সিনিয়র জার্নালিস্ট ফোরামের আহ্বায়ক মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত।
বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় সেমিনারের শুরুতে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন
সাংবাদিক কে.এম ইউসুফ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সীতাকুণ্ড তাহের-মনজুর কলেজের অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, দৈনিক নয়াবাংলা সম্পাদক জেড.এম. এনায়েত উল্লাহ হিরু, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এ.এস.এম বজলুর রশিদ মিন্টু, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার জাবেদ আবছার চৌধুরী, দি কমার্শিয়াল টাইমস এর সম্পাদক সুজিত কুমার দাশ। আলোচনায় অংশগ্রহণ
করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, চাটগাঁর সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী, রাজনীতিবিদ স্বপন সেন, বাংলাদেশ সরকারের কর্মচারি সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক
সৈয়দ নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল তারেক, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন আবু, সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদ চৌধুরী, মানবাধিকার সাংবাদিক জসিম উদ্দিন সিকদার, ন্যাপ নেতা অজিত দাশ, সমাজকর্মী কাজল সিংহ, সাংবাদিক মো. নজিরুল, শ্রমিক নেতা মো. মনির হোসেন, সাংবাদিক অরুণ বৈষ্ণব প্রমুখ।
আরও পড়ুন আইআইইউসি’তে ‘অনলাইন ভিত্তিক উগ্রবাদের প্রতিরোধে ছাত্রছাত্রীদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার
এসময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেমিনারের সভাপতি সাংবাদিক এস.এম.
জামাল উদ্দিন। সেমিনার শেষে দোয়া পরিচালনা করেন মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া চৌধুরী।
সেমিনারেরে মুখ্য আলোচক প্রবীণ সাংবাদিক নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত বলেন, ‘যাদের জীবনাদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করত, যাদের
ত্যাগ, ব্যক্তিত্ব, সম্ভ্রম ও সমীহের কারণ ছিল তারা সকলেই অন্তর্হিত। অনেকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা থেকে আজ আমরা বঞ্চিত। আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের জীবনাদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করত, এখনো করে।
তিনি আরো বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সর্বগুণে গুণান্বিত এক অসাধারণ মানুষ। ইংরেজী শিক্ষিত ও প্রকৌশলী হওয়া সত্ত্বেও তার কথাবার্তা, স্বভাব-চরিত্র, পোশাক পরিচ্ছদে ইসলামী ভাবধারা ও সংস্কৃতি ফুটে উঠেছিল। তিনি মানুষকে ভালবাসতেন ও মানুষের মঙ্গল চাইতেন আন্তরিকভাবে। আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার শুধু সম্পাদক বা প্রকৌশলী ছিলেন না, ছিলেন এক কৃতি সমাজ সংস্কারক ও
বুজুর্গ। আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) বলেছিলেন, বুজুর্গদের জীবন-চরিত আলোচনা করলে আল্লাহর রহমত নাজিল হয়। বুজুর্গ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের জীবনি আলোচনা করে আমরা আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হই।
কাদেরী শওকত বলেন, ‘আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন দেশ ও মানবসেবার মহান ব্রত এবং মিশনারী স্প্রিট নিয়ে। এখন অনেকেই ব্যবসার উদ্দেশ্য নিয়ে বা নিজেদের অপকর্মের ঢাল হিসেবে রক্ষা পেতে সংবাদপত্র প্রকাশ করছেন। যাতে অন্য পত্রিকায় এদের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করতে ইতস্তত হয়। সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হলেও শিল্পপতিরা যারা সংবাদপত্র প্রকাশ
করেছে তারা ছাড়া অন্যরা অর্থাৎ যে সকল সাংবাদিক সংবাদপত্র প্রকাশ করে তারা শিল্পের সুযোগ সুবিধা পায়না, অতীতেও পায়নি।
কাদেরী শওকত বলেন, ‘আত্মীয়তার কারণে মরহুম আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে অনেক স্নেহ, ভালোবাসা ও অনুকরণীয় বিষয় পেয়েছি। যা একজন মানুষকে পুণ্যবান হতে পথ দেখায়। আমরা দেখতাম ইঞ্জিনিয়ার সাহেব গৃহবৃত্ত, তার জমির ক্ষেত মজুরসহ সকলকে নিয়ে একসাথে খাবার খেতেন, তার মধ্যে কোনো অহমিকা ছিল না।’
চট্টগ্রাম আইনজীবি সমিতির সভাপতি এড. মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সেই সময়টাতে বাঙালী মুসলমান সমাজ বিশেষ করে শিক্ষা দীক্ষা এবং জ্ঞান চর্চা থেকে অনেকটা বিচ্যুত ছিল। আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার আজাদী পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে চমৎকার একটা দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জানি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হলে অনেক পত্রিকা জাতীয় পত্রিকা হয়ে যায়, তবে আজাদীর সাথে সম্পৃক্ততা জাতীয় পর্যায়ে সকল বুদ্ধিজীবী এবং আমাদের সিভিল সোসাইটি সবার সাথে ছিল। অত্যন্ত কঠিন সময়ে আজাদীর সৃষ্টি, এখন আবারো কঠিন সময়ের সৃষ্টি হয়েছে। আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সাহস নিয়ে প্রকাশনা জগতে উদাহারণ সৃষ্টি করেছেন। সেটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বজায় রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে সাংবাদিক এস.এম. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামের সংবাদপত্র শিল্প, মুদ্রণ ও প্রকাশনা জগতে মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের অবদান ঐতিহাসিক। মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার চট্টগ্রামের সাংবাাদিকতার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ৭১ এর মহান
মুক্তিযুদ্ধ, সর্বোপরি ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং গণতন্ত্রের পথকে সুগম করতে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব প্রতিষ্ঠিত দৈনিক আজাদী অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে, যা অবশ্যই স্মরণযোগ্য। মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের চরিত্রকে অনুসরণ করলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।’