চাটগাঁর সংবাদ ডেস্ক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে ক্ষমতা হারায় টানা ১৬ বছর প্রভাব বিস্তার করা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অসহায় হয়ে পড়েন দলটির নেতাকর্মীরা। জীবন বাঁচাতে কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও চলে যান আত্মগোপনে। কেউ কেউ গোপনে দেশ ত্যাগ করেন। দেশে থাকা সাবেক মন্ত্রী ও শীর্ষ নেতাদের অনেকে আছেন প্রশাসনের নজরদারিতে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার জন্মস্থান গোপালগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই প্রতিক্রিয়াও থেমে যায়। এরপর ১৫ আগস্ট সামনে রেখে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানানো হয় দলের হাইকমান্ড থেকে। শেখ হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে নেতাকর্মীদের কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান। তবে কিছু সংস্কৃতিকর্মী এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ছাড়া তেমন কাউকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসতে দেখা যায়নি। এরপর দলটি পড়ে আরেক চ্যালেঞ্জে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় একের পর এক মামলা হতে থাকে নেতাকর্মীদের নামে। চলে ধরপাকড়। এর মধ্যে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতা গ্রেপ্তার হন। এমন বাস্তবতায় দলটির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা কী হবে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভাষ্য, বর্তমান পরিস্থিতি দলীয় পরিকল্পনা বা কর্মসূচির সময় নয়। নিজেদের নিরাপদে রেখে পরিস্থিতি বোঝার সময়। তাই যে যেভাবে পারেন নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত আছে। কেউ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। অথচ এসব নিয়ে মানবাধিকারকর্মীরা কথা বলছেন না। গণমাধ্যমেও সেভাবে আসছে না। আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে কী হতে যাচ্ছে। তাই আমরা একটু সময় নিচ্ছি। নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছি।’
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের মাটি থেকে ভেদ করা উঠে আসা দল। এই দলটি স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছে। দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ফলে এই দলটি শেষ হয়ে যাওয়ার নয়। বরং অনেকের পরিণতি দেখার অপেক্ষায় আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে এখন নানা ধরনের গোষ্ঠী ক্রিয়া করছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে মেরে ফেলা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর বাড়ি লুট হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার কথাই আগে ভাবছি। কিছুদিন যাক তারপর আওয়ামী লীগ স্বকীয় চরিত্রে মাঠে নামবে।’
অন্যদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ সক্রিয় করা হয়েছে। এতে নেতাকর্মীদের দুরবস্থা, দেশের পরিস্থিতি এবং দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দলের অগ্রজ কয়েকজন নেতার বিবৃতিও আসছে। এই পেজটি কে কোথা থেকে চালাচ্ছেন, তা জানা যায়নি। দলের দুই নেতা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে বিবৃতি দেওয়ায় দলীয় ফেসবুক পেজের বিবৃতির সঙ্গে এর মিল পাওয়া যায়। তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে ফেসবুক পেজটি দলেরই কেউ না কেউ চালাচ্ছেন।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শেখ হাসিনাসহ নেতাকর্মীদের নামে সারাদেশে হত্যা মামলাসহ একের পর এক মামলা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নামে প্রায় সব জেলাতেই মামলা হচ্ছে। দলের এক এক নেতার নামে শতাধিক মামলাও হয়েছে। সেই মামলা চলমান আছে। ইতোমধ্যে বেশ কজন সাবেক মন্ত্রী ও নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আত্মগোপনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈকতসহ বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে আটক ও পুলিশি রিমান্ডের মুখোমুখি হয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদেরও রিমান্ডের মুখোমুখি করা হয়েছে।
এ অবস্থায় গ্রেপ্তার ও হামলা থেকে রেহাই পেতে আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা বর্ডার অতিক্রম (অবৈধ পথে) করে পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে প্রবেশ করেছেন। অনেকে আবার ভারত থেকে অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, যাদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাদের অনেকে ইতোমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের দেশে ফেরার পরিকল্পনা নেই। আর দেশে আত্মগোপনে থাকা তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে পরিস্থিতি ও সময় বুঝে কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন শীর্ষ নেতারা।