জুয়েল বড়ুয়াঃ মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নে মর্মান্তিক এক খুনের ঘটনায় মুষড়ে পড়েছেন দক্ষিণ সাইরার গ্রামবাসী। সেখানে ডেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ বছর বয়েসি প্রথম শ্রেণির এক শিশুকে ধর্ষনের পর হত্যা করে পেকুয়া থানার ডেউয়াখালী উজানটিয়া নদীতে পুঁতে দেয় ঘাতক মো. সোলাইমান (২৫)। সোলায়মান টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের (চাকমার কূল) উত্তর হ্নীলা গ্রামের ছৈয়দ করিমের পুত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. সোলাইমান মাতারবাড়ী উত্তর সিকদার পাড়া আলতাফ হোছাইনের মেয়ে শাহিদা আক্তারের স্বামী। নিহত শিশু মাহিয়ার পিতা আয়াতুল্লাহর বাড়িতে তারা ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। সোলায়মান মূসা কলিম উল্লাহর অধীনে মাতারবাড়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিকের কাজ করতেন।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ প্রণব চৌধুরী বলেন, প্রতিটি শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত। খুনি মো. সোলাইমানের স্বীকারোক্তি মতে, নিহত শিশু মাহিয়ার হত্যাকারী। তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।’ প্রণব কুমার চৌধুরী আহবান জানিয়েছেন প্রত্যেক শিশুর মাতা পিতাকে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২ ডিসেম্বর শিশু মাহিয়ার পিতা আয়াতুল্লাহ মহেশখালী থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করান। মহেশখালী থানার মাতারবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের এসআই হাসান মাহমুদ প্রাথমিক তদন্তের ভার নিলে খুনি মো. সোলাইমান শিশু মাহিয়ার পিতা আয়াতুল্লাহকে মুঠোফোনে হুমকি দেয়। এর আগে সোলায়মান মাহিয়ার পিতার কাছে মুক্তিপণও দাবি করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সোলায়মান মুঠোফোনে আয়াতুল্লাহকে বলেন, ‘তুই আমার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছিস আমার বিরুদ্ধে জিডি করে লাভ হবে না আমি সব জানি’। শিশু মাহিয়ার পিতা বলেন, আমি থানায় জিডি করেছি সে কিভাবে জানে? আয়াতুল্লাহরর মনে সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে। সন্দেহের তীর খুনি মো. সোলাইমানের স্ত্রী শাহিদা আক্তারের দিকে। খুনি মো. সোলাইমানের স্ত্রী শাহিদা আক্তারই মহেশখালী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করানোর তথ্যটি সোলাইমানকে দেয় বলে অভিযোগ করেন নিহত শিশু মাহিয়ার পিতা আয়াতুল্লাহ। ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মহেশখালী থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সন্দেহ জনক সব স্থানে তল্লাশি চালিয়ে শিশু মাহিয়ার খুনি মো. সোলাইমানকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। খুনি সোলাইমান স্বীকার করেন, ‘আমি মাহিয়াকে ধর্ষণ করে খুন করেছি পরে তার পিতার কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করি।’ সে স্বীকারোক্তিতে আরো জানায়, ‘আছমা আক্তার নামে আমি আরো একজনকে খুন করি।’ এই ঘটনায় টেকনাফ থানায় ৪ নভেম্বর ২০১৮ সালে খুনি মো. সোলাইমানের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করা রয়েছে।
৫ ডিসেম্বর মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের এসআই হাসান মাহমুদ খুনি মো. সোলাইমানের ব্যবহৃত সিম নাম্বারটি উদ্ধার করেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই বিষয়ে এসআই হাসান মাহমুদ সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেয়নি। তিনি বলেন, ‘সিমটি মহেশখালী হোয়ানক ইউনিয়নের এক লোকের নামে রেজিষ্ট্রেশনকৃত কিন্তু লোকটি কে আমি বলতে পারবনা, জব্দকৃত মালামাল আদালতে প্রেরণ করব।’ নিহত শিশুর পিতা আয়াতুল্লাহ অভিযোগ করেন, মাহিয়া হত্যাকাণ্ডের পিছনে খুনি মো. সোলাইমানের স্ত্রী শাহিদা আক্তার ও তার শ্যালিকা জড়িত আছে। সোলাইমানসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
দক্ষিণ সাইরার ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোনাফ বলেন, ‘নিহত শিশু মাহিয়া আমার স্কুলের ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মাহিয়া ছিলো শান্ত স্বভাবের। মাহিয়ার মৃত্যুতে আমি ও অন্যান্য শিক্ষকেরা গভীর শোকাহত। আমরা শিশু মাহিয়ার খুনি মো. সোলাইমানের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত দ্রুত বিচার আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করছি।’
Leave a Reply