আজ ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলার অন্যতম পুরোধা শিল্পী কামরুল হাসান। কলকাতায় ১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসে ভর্তি হন এবং ১৯৪৭ সালে তিনি চিত্রকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠায় অংশ নেন।
ঢাকায় চিত্রকলার চর্চা ও প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৫০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ঢাকা আর্ট গ্রুপ’। ১৯৬০ সালে তিনি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের নকশাকেন্দ্রের প্রধান নকশাবিদ নিযুক্ত হন এবং ১৯৭৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও বেতার দপ্তরে প্রধান নকশাবিদের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশা তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে কামরুল হাসানের আঁকা পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানের দৈত্যাকৃতির পোস্টার তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। চিত্রকলার মাধ্যমে তিনি আবহমান বাংলার গ্রামীণ সমাজের সামগ্রিক রূপ, বাংলার নিসর্গ, মুক্তিযুদ্ধ এবং পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার চিত্র তুলে ধরেছেন। চিত্রকলায় লৌকিক ও আধুনিক রীতির মিশ্রণ ঘটিয়ে তিনি ‘পটুয়া কামরুল হাসান’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।
১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় কবিতা পরিষদের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার সময় কামরুল হাসানের আঁকা শেষ স্কেচটি ছিল তৎকালীন সামরিক স্বৈরাচার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্যারিকেচার ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পড়ে’। কবিতা পরিষদের মঞ্চেই তার হার্টঅ্যাটাক হয় এবং কিছুক্ষণ পরই এই শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সমাধির পাশেই কামরুল হাসানকে সমাহিত করা হয়।
Leave a Reply