অব্যাহত দরপতন শেষে গত সপ্তাহে বৈশ্বিক পণ্যবাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো, বিশেষ করে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এ সময় মুদ্রা সংকোচন নীতি শিথিল রাখায় বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। মুদ্রাবাজার সংশ্লিষ্টদের ধারণা, আগামী মাসে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ৫০ বেসিস পয়েন্টে সুদের হার বাড়াবে। এ ধারণা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা ৬৫ শতাংশ। আবার কেউ বলছেন, ওই মাসে ব্যাংকটি ৭৫ বেসিস পয়েন্টে সুদের হার বাড়াবে। এ ধারণা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা ৩৫ শতাংশ।
এদিকে শিকাগো ফেডের প্রেসিডেন্ট চার্লস ইভান জানান, সুদের হার বৃদ্ধির এ ধারা ৫০ বেসিস পয়েন্টে শেষ হলে ফেডের জন্য সুবিধা হবে। তবে বোস্টন ফেডের প্রেসিডেন্ট সুজান কলিনস ৫০ বেসিস পয়েন্টে সুদের হার বৃদ্ধিকেও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি বলে বিবেচনা করছেন।
রিচমন্ড ফেডের প্রেসিডেন্ট থমাস বার্কিন বলেন, লম্বা সময় ধরে সুদের হার বাড়ানোর ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে মুদ্রা সংকোচনের এ ধারা শ্লথ হয়ে আসতে পারে। আনাদোলু এজেন্সি এক প্রতিবেদনে জানায়, গত সপ্তাহে স্বর্ণের দাম ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। আর রুপার দাম ৮ দশমিক ২ ও প্লাটিনামের ১ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। চীন ‘জিরো কভিড-১৯ পলিসি’ পরিত্যাগ করতে পারে, এমন খবরে হঠাৎ করেই ধাতব পণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। এর মধ্যে তামার দাম ৫ দশমিক ২ শতাংশ, সিসার ৫ দশমিক ২, অ্যালুমিনিয়ামের ৪ ও নিকেলের দাম ১ শতাংশ বেড়েছে।
জ্বালানি পণ্যগুলোর দামও এ সময় লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস। বাজারজুড়ে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল তা কিছুটা কমায় ব্রেন্টের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলক ও ব্যবহারকারী দেশ। সম্প্রতি দেশটিতে জ্বালানি তেলের মজুদ বেশ কমেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে চাহিদা বাড়ার কারণেই মজুদ কমছে। অন্যদিকে শীতকালীন চাহিদার কারণে বাড়ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম। ধারণা করা হচ্ছে, জ্বালানিটির চাহিদা লম্বা সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রাখবে।
গত সপ্তাহে কৃষিপণ্যগুলোর দাম দ্রুত বেড়েছে। এর মধ্যে শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে গমের দাম ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। আর সয়াবিনের দাম ৪ দশমিক ৪ ও চালের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া তুলার দাম ১৫ দশমিক ১ শতাংশ, কফির দশমিক ৪, চিনির ৫ দশমিক ১ ও কোকোর দাম ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে কৃষিপণ্য উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ার পূর্বাভাস মিলেছে। পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গমের রফতানি বাণিজ্য বড় ধরনের বাধার মুখে পড়েছে। এ দুটি বিষয় কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে। রাশিয়া কৃষ্ণসগরীয় শস্য রফতানিসংক্রান্ত চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়ায় গমের দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে।
তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা
Leave a Reply