ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন প্রদেশে আরও বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণ থেকে শহরটি নিজেদের দখলে ধরে রাখতে হামলা প্রতিহত করতে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রুশ বাহিনী এই অঞ্চল থেকে পিছু হটে এবং নিপার নদীর পশ্চিম তীরে ফাঁদে আটকা পড়ার ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কিন্তু এখন তারা পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর কয়েকদিনের মাথায় শহরটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল রুশ বাহিনী। এরপর গত মাসে খেরসন সহ দোনেৎস্ক, লুহানস্ক এবং জাপোরিজিয়াকে রাশিয়ার অংশ বলে ঘোষণা করে। অঞ্চলটিতে নিযুক্ত রুশ কর্তৃপক্ষ সেখানকার বাসিন্দাদের পূর্ব তীরে সরিয়ে নিচ্ছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্তভিচ বলেন, রুশ বাহিনী শহরটি ছেড়ে চলে যাচ্ছে এমন কোনো লক্ষণ নেই। সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় ওলেক্সি বলেন, খেরসনে সবকিছু পরিষ্কার, রাশিয়ানরা সেখানে জনবল পুনরায় বাড়াচ্ছে এবং তাদের অবস্থান শক্তিশালী করছে। তিনি আরও বলেন, এর মানে হল রাশিয়া সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে না। বিপরীতে, খেরসনে সবচেয়ে ভারী যুদ্ধ হতে চলেছে।
এদিকে লুহানস্কের ক্রেমিনা এবং ভাতোভ জেলায় তীব্র লড়াই চলছে বলে জানা গেছে। গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনীয় বাহিনী খারকিভ থেকে রুশ বাহিনীকে তাড়া করার পর থেকেই এই দুটি জেলায় যুদ্ধ চলছে। লুহানস্কে সামরিক আইন জারি করেছে রাশিয়া।
রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অভিযোগ করেছে যে, ইউক্রেন ‘ডার্টি বোমা’ তৈরি করছে। জাতিসংঘে রাশিয়ার ডেপুটি রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট সন্তুষ্ট কারণ আমরা সচেতনতা বাড়িয়েছি। আর লোকে যে বলছে, রাশিয়া নেকড়ের কান্না কাঁদছে তাতেও আমি কিছু মনে করি না। এটি না ঘটলেও আমাদের সমস্যা নেই। কারণ এটি একটি ভয়ানক, ভয়ানক বিপর্যয়, যা সমগ্র পৃথিবীর জন্যই হুমকি হবে’। কোনো প্রমাণ না দিয়েই রাশিয়া অভিযোগ করেছে, কিয়েভ দুটি সংস্থাকে একটি ডার্টি বোমা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে।
এর জবাবে জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের ডেপুটি রাষ্ট্রদূত জেমস কারিউকি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো প্রমাণ দেখিনি এবং শুনিনি। তিনি এই অভিযোগকে রাশিয়ার ‘পরিষ্কার মিথ্যা অভিযোগ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি বিশুদ্ধ রাশিয়ান মিথ্যা তথ্য, এমনটা আমরা আগেও অনেকবার দেখেছি এবং রাশিয়ার এমন প্রচারণা বন্ধ করা উচিত’।
প্রসঙ্গত, ডার্টি বোমা হলো এমন একটি বোমা যা ডিনামাইটের মতো প্রচলিত বিস্ফোরক এবং পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় পদার্থের মিশ্রণে তৈরি করা হয়। এটিকে কোনো দেশ নয় সন্ত্রাসীদের জন্য একটি অস্ত্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কারণ এটি কোনো সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে নির্মূল করার বদলে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই ডিজাইন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো যুদ্ধে এর ব্যাবহার হয়নি। কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনও ডার্টি বোমার ব্যবহার করেনি। ১৯৯৫ সালে চেচেন বিদ্রোহীরা রাশিয়ার মস্কোতে একটি ডার্টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া আল-কায়েদা এবং আইএস এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠন ডার্টি বোমা ব্যবহার করতে চেয়েছিল, তবে সফল হতে পারেনি।
Leave a Reply