ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারে প্রায় সব পণ্যের দর ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় অব্যাহত সুদের হার বাড়ছে। অর্থনীতিতে অস্থিরতার কারণে সরবরাহ সংকট থাকা সত্ত্বেও অনেক পণ্যের দাম কমছে। আবার অনেক পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, তাইওয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন এরই মধ্যে আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়িয়েছে।
বন্ড ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে দীর্ঘ সময় ধরেই অস্থিরতা চলছে। সম্প্রতি ব্যাংক অব ইংল্যান্ড অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে বাজার থেকে বন্ড কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে মুদ্রাবাজারে চলমান অস্থিরতা কিছুটা শিথিল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলেও মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
সম্প্রতি ব্রিটেন সরকার বিপুল হারে কর কমিয়ে আনার প্রস্তাবিত পরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছিল। এ ঘোষণার পর দেশটির মুদ্রা পাউন্ডের দাম বেড়ে রেকর্ড সর্বোচ্চে আরোহণ করে। মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা প্রকট আকার ধারণ করে। তবে সোমবার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেন। এতে পাউন্ডের বিনিময় মূল্য কিছুটা কমেছে, যা মুদ্রাবাজারের জন্য স্বস্তির সুবাতাস বয়ে এনেছে।
এদিকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বন্ড মার্কেটে হস্তক্ষেপ করার পরও গত সপ্তাহে ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বন্ড সাময়িকভাবে কেনা শুরু করেছে ব্যাংকটি। উদ্দেশ্য মুদ্রাবাজারে স্থিতি ফিরিয়ে আনা।
বন্ড মার্কেটে চলমাান উদ্বেগ বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। এদিকে পাউন্ডের পাশাপাশি ডলারের বাজারেও লম্বা সময় ধরে উত্থান-পতন লক্ষ করা গিয়েছে। সম্প্রতি মুদ্রাটির বিনিময় মূল্য বেড়ে ২০ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছে। তবে দুয়েক দিনের ব্যবধানে দাম কমেছে। ডলারের দাম কমায় পণ্যের দামের ওপর থেকে চাপ কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে নতুন করে রাশিয়ার ওপর ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার খবরে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতু স্বর্ণের দাম কমে দুই বছরের সর্বনিম্নে নেমে গিয়েছিল। ওই সময় প্রতি আউন্স স্বর্ণ লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬১৫ ডলারে। ২০২০ সালের এপ্রিলের পর এবারই প্রথম ধাতুটির দাম এতটা কমেছে। তবে চলতি সপ্তাহে দাম ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি আউন্স স্বর্ণের মূল্য স্থির হয়েছে ১ হাজার ৬৬২ ডলারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উদীয়মান বাজারগুলোর মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম কিছুটা কমায় স্বর্ণের দাম বেড়েছে। আর ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের বন্ড ক্রয়সংক্রান্ত প্রোগ্রাম চালু ও ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে একই প্রবণতা দেখা দিয়েছে অন্যান্য পণ্যের বাজারেও।
Leave a Reply