আ ব ম খোরশিদ আলম খান >>> হিজরি বছরের নবম মাস রমজানুল মোবারক। রমজানের পুরো মাসেই রোজা রাখা ফরজ। ইসলামের সূচনালগ্নে এ রোজা ফরজ ছিল না। সিয়াম বা রোজা কেবল আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়নি বরং পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতদের ওপরও রোজার বিধান প্রযোজ্য ছিল। পূর্ববর্তী নবীদের শরীয়তেও রোজার ফরজ বিধান থাকলেও ধরন ও পদ্ধতি ছিল ভিন্ন। প্রথম নবী হযরত আদম আলাইহিস সালামের শরীয়তেও সিয়ামের বিধান ছিল। আগের নবীদের শরীয়তে প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজার বিধান ছিল বলে নানা তফসির গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রতি মাসে এই ৩ দিনের রোজা ‘আইয়্যামে বিজ’ নামে খ্যাত। প্রসিদ্ধ তাফসিরবিদ দাহ্হাক বর্ণনা করেছেন, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম থেকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (দ.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবীর যুগেই প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়ামের বিধান প্রযোজ্য ছিল। শেষকালে রমজানে মাসব্যাপী সিয়ামের বিধান দেয়া হলে মাসিক তিন সিয়ামের বিধান রহিত হয়। (সূত্র : তাফসিরে ইবনে কাছির রহ.)। বছরের ৫ দিন নিষিদ্ধ সময় ছাড়া হযরত দাউদ (আ.) একদিন পরপর প্রায় সারা বছরই রোজা রাখতেন। তিনি একদিন রোজা রাখতেন, আরেকদিন ছেড়ে দিতেন।বহু বিশুদ্ধ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী করিম (দ.) এর সময়ে মদিনার ইহুদিরা সিয়াম পালন করত মহররম মাসের আশুরার দিনে তথা দশম তারিখে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদিনার হিজরতের পরে নবী করিম (দ.) দেখতে পেলেন, ইহুদিরা আশুরার সিয়াম পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন এই আশুরার দিনে তোমরা কেন রোজা রাখছো? তখন তারা বললো, এই দিনটি এক মহান মহিমান্বিত দিন। এ দিনে আল্লাহ পাক হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতিকে ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার করেন এবং ফেরাউনকে সদলবলে সলিল সমাধি তথা সমুদ্রে নিমজ্জিত করে ডুবিয়ে মারেন। তাই, হযরত মুসা (আ.) এ দিনটির স্মরণে সিয়াম বা রোজা পালন করেছিলেন। আমরাও তাঁর অনুসরণ–অনুকরণে এই সিয়াম পালন করছি। নবী করিম (দ.) তাদের জবাব শুনে বললেন, হযরত মুসা (আ.) এর বিষয়ে তোমাদের চেয়ে আমরাই অধিকতর হকদার। এরপর তিনি আশুরার সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন। (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)। হযরত মূসা (আ.) ও তাঁর জাতি সমপ্রদায়ের মুক্তির এই মহান দিনে ইহুদিদের সিয়াম পালনের উল্লেখ পাওয়া যায় হাদিসে। নিজ মাতৃভূমি মক্কায় সুদীর্ঘ তেরটি বছর নির্যাতন–নিপীড়নের শিকার হয়ে অত্যন্ত দুঃখ কষ্ট ও ক্লেশের সাথেই দিন কাটান প্রিয় নবী (দ.) ও তাঁর অনুসারী সাহাবায়ে কেরামগণ। মক্কায় তখন খাদ্যাভাব ছিল। নিরাপত্তা বলতে কিছুই ছিল না। চরম অস্থিরতা–অশান্তিতে তাঁদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছিল। এমন কঠিনতর অবস্থায় রোজার বিধান দেয়া হলে, কষ্টের সীমা থাকতো না। মহান আল্লাহপাক তো বড় বিজ্ঞানময় ও হিকমতওয়ালা। তাঁর কোনো কাজ হিকমত বা রহস্য থেকে মুক্ত নয়। যে ইবাদতই হোক তা আমল করার জন্য দরকার উপযুক্ত পরিবেশ। নামাজের বিধানও এমন সময়ে দেয়া হয় যখন পরিবেশ কিছুটা অনুকূল ছিল। নবী করিম (দ.) যখন মক্কায় অবস্থান করছিলেন তখন পবিত্র হজের অনুকূল পরিবেশ ছিল না। এ কারণে হজ ফরজ হয়েছে মক্কা বিজয়ের এক বছর পর নবম হিজরি সনে। নবী করিম (দ.) মদিনা শরিফে হিজরতের পর ইবাদতের পরিবেশ ফিরে আসে। এমন অনুকূল পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় হিজরি সনের ৮ম মাস শাবানে রোজার ফরজ বিধান দেয়া হয়।
Leave a Reply