আজ ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সরকার এসেছে গেছে তবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি অধরাই রয়ে গেল!


জীবন বাজি রেখে দেশের প্রেমে ঝাঁপিয়ে পড়া এ ব্যক্তির নাম মুক্তিযুদ্ধা রফিক আহমেদ। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মিলেনি তার। স্বীকৃতি পেতে মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মৃত্যুর আগে হলেও যেন স্বীকৃতিটি দেখে যেতে পারেন।এমনটাই প্রত্যাশা পরিবারের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়া রফিক আহমেদ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলান্দা গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়াও পটিয়া ক্লাবের প্রতিষ্টাতা সদস্য তিনি। সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত রফিক আহমেদ বর্তমানে নিজের গ্রামের বাড়িতে জীবনের শেষ সময়টুকু অতিবাহিত করছেন অসুস্থতা ও নানা দুঃখ কষ্টে।

রফিক আহমেদ বলেন ১৯৭১ সালে বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ কলেজের গনিত বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার চৌধুরীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। এপ্রিলে স্যারসহ আমরা ভারত যাওয়ার প্রস্ততি নিতে থাকি। সে সময় ভারতে যাওয়ার জন্য বান্দরবান থেকে পাহাড়ি পথে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পদুয়া হয়ে দোভাষী বাজারে উপস্থিত হই। স্যারের গাড়ি ছিল সবার আগে। জিপ রওয়ানা হয় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্দেশে। ইমাম গাজ্জালি কলেজ পার হবার পর আমরা গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। জানতে পারি স্যারের উপর হামলা হয়েছে। এ হামলায় স্যারসহ অনেকে শহীদ হন। তিনি আরও বলেন, এরপর পটিয়ার পূর্ব পাহাড়ে খুরুশিয়ার বাঘাইয়া চাকমার খামার বাড়িতে লাঠি আলম, হাবিলদার ইছহাকের অধীনে অস্ত্র চালনা ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। পরে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের মিজোরামের দেমাগ্রী ক্যাম্পে যোগ দিই। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে হানাদার বাহিনী আমার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আমার মা-বাবার উপর অনেক নির্যাতন করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি দীর্ঘ ৩০ বছর জীবিকার তাগিদে বিদেশে ছিলাম।’চেষ্টা তদবির দৌড় ঝাপ করা সম্ভব হয়নি। অতপর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় যুক্ত হওয়ার জন্য ২০২০সালের ১৯ জানুয়ারি আবেদন করেছেন বলেও জানান রফিক আহমেদ; যার নাম্বার ৭০৮১৬৪০০৫২০৩২৫।

এছাড়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ এপ্রিল ২০২০ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরও একটি আবেদন করেন তিনি।এর পর সমাজ সেবা নথিভূক্ত হয়ে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম থেকে উপযুক্ত বিবেচিত হয়ে ফরোয়ার্ডিং সহকারে মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করা হয়েছিল।

৬৯-এ স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে পড়ার সময় ১১ দফা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক ছিলেন। রণাঙ্গণে ওনার অবিস্মরণীয় অবদান থাকা সত্বেও স্বীকৃতি মেলেনি আজও। বর্তমানে তিনিবঅসুস্থ। মস্তিস্কের এক পাশে ব্লক ধরা পড়েছে। যার কারণে অনেক কথা এখন ভুলে যাচ্ছেন। বাবাকে স্বীকৃতি দিতে মাননীয় প্রধানউপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মিজোরামের দেমাগ্রী ট্রেনিং ক্যাম্পের গ্রুপ লিডার এ এফ এম তোজাম্মেল হোসেন জানান, রফিক আহমেদ তার অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি দেমাগ্রী ট্রেনিং ক্যাম্পে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। রফিক আহমেদ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে প্রত্যয়নও দিয়েছেন এ এফ এম তোজাম্মেল হোসেন।
রফিক আহমেদের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা অনেকেই বলেছেন, ‘রফিক আহমেদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আমরা একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কী কারণে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি বুঝতে পারছি না।পটিয়া তথা চট্টগ্রামের প্রবীন মুক্তিযোদ্ধারা রফিক আহমদ এর নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর