আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হবে গ্রেট ব্রিটেন তথা যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচন। হাউস অব কমন্সে ৬৫০টি আসনে ৩৯২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করবেন। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৫১৫ প্রার্থী নির্বাচনি লড়াইয়ে নেমেছেন।
বিশ্বের অন্যতম বিশ্ব মোড়লদের দেশে নির্ধারিত সময়ের আগে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে চোখ এখন বিশ্ববাসীর। আলোচিত এই নির্বাচনে বিভিন্ন দলের এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্তত ৩৪ জন ব্রিটিশ নাগরিক। সরকার গঠনের জন্য যেকোনো দলের জন্য প্রয়োজন ৩২৬টি আসন। ধারণা করা হচ্ছে ১৪ বছর পর ব্রিটেনে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বর্তমান বিরোধী দল লেবার পাটি।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল কনজারভেটিভ পার্টি থেকে ২ জন এবং লেবার পার্টি থেকে ৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন থেকে ৬ জন, রিফর্ম পার্টি থেকে ১ জন, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস থেকে ১ জন, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট থেকে ১ জন, গ্রিন পার্টি থেকে ৩ জন, সোশ্যালিস্ট পার্টি থেকে ১ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
যেসব বাংলাদেশি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন:
প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আটজন ব্রিটিশ নাগরিক মনোনয়ন পেয়েছেন। বর্তমানে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আবার মনোনয়ন পেয়েছেন— এমন চারজন হলেন রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক ও আফসানা বেগম। রুশনারা লড়ছেন বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনিগ্রিন আসন থেকে, রুপা ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন থেকে, টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন থেকে এবং আফসানা লড়ছেন পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে।
এবারই নতুন করে মনোনয়ন পাওয়া অপর চার প্রার্থী হলেন— উইথহাম থেকে রুমী চৌধুরী, সাউথ নর্থাম্পটনশায়ার থেকে রুফিয়া আশরাফ, গর্ডন অ্যান্ড বোচান থেকে নুরুল হক আলী এবং ব্রিগ অ্যান্ড ইমিংহাম আসন থেকে নাজমুল হোসাইন।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির মনোনয়নে এবার নির্বাচনি মাঠে লড়ছেন দুজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তাদের মধ্যে দক্ষিণ লন্ডনের টটেনহাম আসন থেকে আতিক রহমান এবং ইলফোর্ড সাউথ আসন থেকে সৈয়দ সাইদুজ্জামান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ছাড়াও অন্যান্য দল থেকেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকরা মনোনয়ন পেয়েছেন। এরমধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন থেকে ৬ জন, রিফর্ম পার্টি থেকে ১ জন, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টি থেকে ১ জন, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি থেকে ১ জন, গ্রিন পার্টি থেকে ৩ জন এবং সোশ্যালিস্ট পার্টি থেকে ১ জন।
ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেনের মনোনয়নে ইলফোর্ড সাউথ আসন থেকে গোলাম টিপু, বেডফোর্ড থেকে প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, হেকনি সাউথ থেকে মোহাম্মদ সাহেদ হোসাইন, আলট্রিচহাম অ্যান্ড সেল ওয়েস্টে থেকে ফয়সাল কবির, ম্যানচেস্টার রসলমো থেকে মোহাম্মদ বিলাল এবং স্টার্টফোর্ড অ্যান্ড বো আসন থেকে হালিমা খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রিফর্ম পার্টির মনোনয়নে ইলফোর্ড সাউথ আসন থেকে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন রাজ ফরহাদ।
এছাড়াও লিবারেল ডেমোক্র্যাটসের মনোনয়নে রাবিনা খান লড়ছেন বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে। স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির মনোনয়নে ডুনফারমলাইন অ্যান্ড ডলার আসনে লড়ছেন নাজ আনিস মিয়া।
গ্রিন পার্টির মনোনয়নে ইলফোর্ড সাউথ আসনে সাইদ সিদ্দিকী, ওল্ডহাম ওয়েস্ট অ্যান্ড রয়টনে সাইদ শামসুজ্জামান শামস এবং লেস্টার সাউথ আসনে শারমিন রাহমান এবং সোশ্যালিস্ট পার্টির মনোনয়নে ফোকস্টোন আসন থেকে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মমতাজ খানম।
দলীয় মনোনয়নে বাহিরেও নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১১ ব্রিটিশ নাগরিক। তারা হলেন— হলবর্ন অ্যান্ড প্যানক্রাস আসনে ওয়েইছ ইসলাম, বেথনালগ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি গ্রিন আসনে আজমাল মাশরুর, সুমন আহমেদ ও সাম উদ্দিন, পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসনে এহতেশামুল হক, স্টার্টফোর্ড অ্যান্ড বো আসনে ওমর ফারুক ও নিজাম আলী, ইলফোর্ড সাউথে নূরজাহান বেগম, নিউক্যাসল সেন্ট্রাল অ্যান্ড ওয়েস্ট আসনে হাবিব রহমান, বেক্সিল অ্যান্ড ব্যাটেল আসনে আবুল কালাম আজাদ, ওল্ডহাম ওয়েস্ট-চেটারটন অ্যান্ড রয়স্টোন আসনে রাজা মিয়া।
যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে কোনো আসনে পাঁচজনের কম প্রার্থী নেই। এছাড়া একটি আসনে সর্বোচ্চ ১৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে ৩১৭টি আসনে মোট ৪৫৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এছাড়া ৩৫টি দল থেকে ১ জন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সংসদ ভেঙে দিয়ে যুক্তরাজ্যে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। দেশটিতে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সুনাক এ বছরের ৪ জুলাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেন। দেশটির বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার রাজনৈতিক জনমত জরিপে উঠে এসেছে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি ভূমিধ্বস জয় নিয়ে প্রাং ১৪ বছর পর দেশটির ক্ষমতায় আসতে চলেছে।
বেক্সিট ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বিশ্বব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত বরিস জনসন। কিন্তু ২০২২ সালের জুলাইয়ে একাধিক কেলেঙ্কারিতে চাপে পড়ে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর নেতৃত্বের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন ঋষি সুনাক। কিন্তু তাকে হারিয়ে তখন কনজারভেটিভ পার্টির যে নেতা প্রধানমন্ত্রী হন, সেই লিজ ট্রাস মাত্র দেড় মাস ক্ষমতায় থাকার পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর আবারও নেতৃত্বের জন্য তার প্রার্থিতা ঘোষণা করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়ে দলের নেতা ও পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন সুনাক। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাত্র দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মুখোমুখি হয়ে কঠিন পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিট্রিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
Leave a Reply