অনলাইন ডেস্কঃ ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন আইনে পরিণত হয়েছিলো ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট। কিন্তু তারও অনেক আগে ১৯৬১ সাল থেকে ভারত শুরু করেছিলো বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ লেখার এক গল্প। সে বছর ফারাক্কা নদীতে বাঁধ নির্মাণ শুরু করেছিলো প্রতিবেশি দেশটি। পরে সেটি নির্মাণ শেষে ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল চালু করা হয়। এরপর বাংলাদেশের একটি বিস্তৃত বরেন্দ্র অঞ্চলে নেমে আসে অভিশাপ।
ফারাক্কা ব্যারাজের কারণে বাংলাদেশের অভিশাপ বহুভাবে ছড়িয়েছে। বাঁধটির কারণে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়; ঘটনা এটুকুই নয়। পানিপ্রবাহ না থাকায় উত্তরবঙ্গের বিরাট এলাকা মরুকরণের দিকে যাচ্ছে, অনেক
নদী মরে গেছে ও যাচ্ছে এবং সেচের জন্য বিপুল ব্যয় হচ্ছে কৃষকের, মৎস্যজীবী অথবা পানির ওপর নির্ভরশীল লাখো মানুষ পেশা হারাচ্ছে।
কিন্তু যারা নিজেদের লাভ করতে গিয়ে অপরের ক্ষতি করেছে প্রকৃতি তাদেরও ক্ষমা করেনি। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার তার রাজ্যের বন্যাদুর্গতির জন্য দায়ী করেছেন পশ্চিমবঙ্গে নির্মিত ফারাক্কা ব্যারাজকে। তিনি দিল্লির কাছে এই বাঁধ অপসারণের দাবিও জানিয়েছেন। আর সেই ১৯৬২ সালেই পশ্চিমবঙ্গের সেচ ও জলপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কপিল ভট্টাচার্য ফারাক্কার তিনটি অভিশাপের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। ১৯৬১ সালে তিনি লিখেছিলেন, ‘ফারাক্কা ব্যারাজের বিরুদ্ধে আমার হুঁশিয়ারি না মানার পরিণতিতে জনগণ দুর্ভোগের শিকার হবে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, এই বাঁধ নদীর পলি-ভরাট হওয়া আরও বাড়াবে, ভাটির দেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পানিপ্রবাহ কমাবে এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ আর বিহারের বেশ কটি জেলায় বন্যার প্রকোপ বাড়াবে।
আরও পড়ুন লেকের বাঁধ ভাঙ্গা পানিতে সাতকানিয়ার মির্জাখীলে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের দাবীতে মানববন্ধন
তার তিন হুঁশিয়ারিই যে ফলে গেছে, তা আজ সর্বজনবিদিত। সে সময় ফারাক্কার বিরোধিতার জন্য ভারতীয় গণমাধ্যম তাকে পাকিস্তানের চর বলেছিলো এবং পরিণামে সরকারি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন এই নদীবিশেষজ্ঞ। আমৃত্যু তিনি তার মতে অটল থেকেছেন এবং নিজের ভবিষ্যদ্বাণী নিজেই ঘটে যেতে দেখেছেন।
ভারতের একতরফা গঙ্গায় বাঁধ দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে ২৯ অক্টোবর, ১৯৫১ সালে। সেই থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক আলোচনা করে। কিন্তু এই আলোচনা যখন চলছিলো তখন ভারত ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণ কাজ অব্যহত রাখে এবং ১৯৭০ সালে এর কাজ সমাপ্ত করে। এ বাঁধ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হতে ভারতের প্রায় ১৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা শুরু করে। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি বণ্টন বিষয়ে এক যৌথ বিবৃতি দেন। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, উভয় দেশ একটি চুক্তিতে আসার আগে ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু খুনের পর ভারত কোনোরকম আলোচনায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে এবং বাঁধটি চালু করে।
এ অভিশপ্ত বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনে রাখা উচিত মাওলানা ভাসানীর কথা। যিনি ৯০ বছর বয়সে এই বাঁধটি অপসারণে লংমার্চ সংগঠিত করেছিলেন।
তার এই কর্মসূচি তখন অনেককে বেশ চমকে দিয়েছিলো। তৎকালে ১৯৭৬ সালের ২ মে মাওলানা ভাসানীকে প্রধান করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট ‘ফারাক্কা মিছিল পরিচালনা জাতীয় কমিটি’ গঠিত হয়।
তথ্যসূত্র: সংগৃহীত
Leave a Reply