অনলাইন ডেস্কঃ মাহে রমজান মাসকে যে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে তন্মধ্যে প্রথম দশদিন রহমত, দ্বিতীয় দশদিন মাগফেরাত আর তৃতীয় দশদিন হলো নাজাত। রমজান মাসের শেষ দশদিনে ইবাদতের ফজিলত বেশি। এ সময় পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছিলো। নাজাতের দিনগুলোর বেজোড় এক রাত্রিতে আসে হাজার রাাতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ মর্যাদার রাত ‘লাইলাতুল কদর’। মু’মিন মুসলমানদের এ রাতটির জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে হয়।
নাজাতের এই দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত করা জরুরি। এসময় ইতেকাফ পালন করে থাকেন অনেকে। আবার অনেকে ভোররাতে তাহাজ্জুদের ইবাদতেও মশগুল হয়ে যান।
এই দিনগুলোতে প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (স.) বিশেষ কিছু দোয়া পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-
বাংলা উচ্চারণ ‘রাব্বানাকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন।’
অর্থ: ‘হে স্রষ্টা, আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি।’ (সুরা দুখান:আয়াত ১২)
বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমিন।’
অর্থ : ‘হে প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।’ (সুরা মুমিনুন:আয়াত ১১৮)
বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’
অর্থ: ‘হে স্রষ্টা, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন: আয়াত ১০৯)
বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।’
অর্থ: ‘(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা কাসাস:আয়াত ১৬)
বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’
অর্থ: ‘হে আমাদের রব, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা আল-ইমরান:আয়াত ১৬)
বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু, আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।’ (সুরা আরাফ:আয়াত ২৩)
বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
বাংলা উচ্চারণ : ‘সামি’না ওয়া আত্বা’না গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।’
অর্থ: ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ:আয়াত ২৮৫)
বাংলা উচ্চারণ : ‘ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আনতা মাওলানা ফানছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক, যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েন না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন।’ (সুরা বাকারাহ:আয়াত ২৮৬)
আরও পড়ুন ইতেকাফে দূরে যায় জাহান্নাম, মিলবে স্রষ্টার নৈকট্য; নারীরাও কী পারবেন?
বাংলা উচ্চারণ : ‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমান।’
অর্থ : ‘হে আমাদের স্রষ্টা! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।’ (সুরা হাশর:আয়াত ১০)
বাংলা উচ্চারণ : ‘রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়ানছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু, আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।’ (সুরা আল-ইমরান:আয়াত ১৪৭)
বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু, সুতরাং আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন।’ (সুরা আল-ইমরান:আয়াত ১৯৩)
বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি।’
বাংলা উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১)
অর্থ : ‘হে পরওয়ারদেগার, আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান দিন এবং আমাদিগকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করুন।’
বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়া লি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি ওয়া লা তাঝআল ফি কুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাজিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহিম।’ (সুরা হাশর:আয়াত ১০)
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা করুন এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করে দিন। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।’
বাবা-মার জন্য দোয়া
বাংলা উচ্চারণ: ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা’
অর্থ: ‘হে আমার প্রভু, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল:আয়াত ২৪)
নাজাতের এই সময়ে বেজোড় এক রাত্রিতে আসবে লাইলাতুল কদর। সে রাত্রি প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার আমি রাসূলকে (স.) জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল (স.), আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?
তখন তিনি একটি দোয়ার কথা জানিয়েছিলেন;
বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা উফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
তথ্যসূত্র: জাগোনিউজ২৪ডটকম
Leave a Reply