ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, যা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়ষ্ক মুসলমানে ওপর আবশ্যক। আল্লাহতায়ালা যেমনিভাবে মানুষদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করে দিয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে রোজার সময়ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আহার করো ও পান করো যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। এর পর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭) অর্থাৎ এর মধ্যবর্তী সময়টা হলো রোজা রাখার সময়।
এ আয়াতের ওপর ভিত্তি করে গবেষক-আলেমরা সতর্কতার জন্য ফজর হওয়ার কয়েক মিনিট আগে সেহরি বন্ধ করার পক্ষে মতামত প্রদান করেছেন। (রদ্দুল মুখতার: ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৭১, ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯৪)।
এ ছাড়া সুবহে সাদিক হওয়া এবং সেহরির সময় বাকি থাকার ব্যাপারে সংশয়যুক্ত সময়ে পানাহার করা মাকরুহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন অনেকে।
তবে এই সময়ে খাওয়ার মাধ্যমে রোজা সহিহ হয়ে যাবে বলেছেন। (আহসানুল ফতোয়া, খণ্ড :৪, পৃষ্ঠা : ৪৩২; আল-ফিকহুল হানাফি ফি সাওবিহিল জাদিদ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৪৩৩)
সেহরির সময় সম্পর্কে হাদিসে পাওয়া যায়— এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাসকে (র) বলল, ‘আমি সেহরি খেতে থাকি। অতঃপর যখন (ফজর হওয়ার) সন্দেহ হয়, তখন বন্ধ করি।’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ সন্দেহ থাকে ততক্ষণ খেতে থাকো, সন্দেহ দূর হয়ে গেলে খাওয়া বন্ধ করো। (ইবনে আবি শাইবাহ, মুসান্নাফ: ৯০৫৭, ৯০৬৭ নং)।
ইমাম আহমাদ (রহ) বলেন, ‘ফজর উদয় হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত না নিশ্চিত হওয়া গেছে ততক্ষণ রোজাদার পানাহার করতে পারবে।’ (ফিকহুস সুন্নাহ: ১/৪০৪)।
নামাজ, সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি
অনেক সময় ঘুম থেকে দেরিতে ওঠার কারণে সেহরি খাওয়া অবস্থায় ফজরের আজান হয়ে যায়, এ অবস্থায় রোজা হবে না। কারণ তখন সেহরির সময় শেষ হয়ে সুবহে সাদিক শুরু হয়ে যায়।
কারণ এখানে সময় দুটি। একটি সেহরি খাওয়ার সময়, আরেকটি ফজরের নামাজের সময়। সেহরির সময়ের মধ্যেই সেহরি থেকে হয় আর ফজরের ওয়াক্ত হলেই ফজরের আজান দেওয়া হয়। ফজরের ওয়াক্তে সেহরি খেলে রোজা হবে না— এটিই বিধান।
আর যদি কেউ সেহরির সময় বাকি থাকতেই ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে মনে করে আজান দিয়ে ফেলে, তা হলে ওই আজান শুদ্ধ হবে না। এমন আজান চলাকালে এবং সেহরির সময় থাকলে আজানের পরও সেহরি খেলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। এখানে মূলকথা আজান নয়, মূলকথা হলো সময় বা ফজরের ওয়াক্ত।
আজান হলো ফজরের নামাজের জন্য, সেহরি খাওয়া বন্ধ করার জন্য নয়। তাই সেহরি তার আগেই বন্ধ করতে হবে। আজান কখনো সেহরি সময়ের মধ্যে দেওয়া হয় না, আজান ফজরের ওয়াক্ত হওয়ারও একটু পরে দেওয়া হয়। আর হাদিস শরিফে যে আজানের পরও সেহরি খাওয়ার কথা আছে, সেটা তাহাজ্জুদের আজান, ফজরের আজান নয়; যা এখনো মক্কা ও মদিনায় প্রচলিত আছে।
সেহরি খাওয়া অবস্থায় ফজরের আজান হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং যথারীতি রোজা পালন করতে হবে। তবে সময়ের পর ভুলক্রমে বা অনিচ্ছাকৃত পানাহার করায় রোজা ভঙ্গ হয়েছে, বিধায় এই রোজাটি রমজানের পর আবার কাজা আদায় করতে হবে।
কিন্তু আজান শোনার পরও যদি পানাহার বন্ধ না করেন, তা হলে কাজার সঙ্গে কাফফারা ও আদায় করতে হবে। যেহেতু প্রথমে ভুলবশত খাওয়া হলেও পরে ইচ্ছাকৃত খাওয়ার দ্বারা রোজা ভঙ্গ করা হয়েছে। (আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)
Leave a Reply