সম্পাদকীয়ঃ দেশের রাজনীতিতে শিষ্টাচার ফেরাতে এবং অর্থনীতির ভিত শক্ত রাখতে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করা জরুরি। এসব কর্মসূচির কারণে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের কী পরিমাণ ক্ষতি হয় তা নিরূপণে গবেষণা ও সমীক্ষা করারো প্রয়োজন রয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ও সরকার বিরোধী অন্যান্য দলগুলোর এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দিনমজুরেরা। তাদের এই ক্ষতির প্রভাব বৃহদাকারে নেতিবাচক প্রবণতা সৃষ্টি করে বড় শিল্পদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানেও। এসব কর্মসূচিতে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। এতে অতিদ্রুত প্রভাব পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামেও।
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসায়ীরা বলছেন, হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীরা অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এজন্য ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়, হরতাল অবরোধ চান না।
আরও পড়ুন আয়কর আদায়ে ‘স্বল্প মেয়াদি কৌশল’ প্রয়োগ করুন
হরতাল-অবরোধে শিক্ষা মাধ্যমেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যায়। পাশাপাশি বিঘ্ন ঘটে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রেও। হরতাল ও অবরোধ চলতে থাকলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার ঘটে। বিশেষ করে অবরোধের আগের দিন বাসে আগুনসহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় এ ভয় আরো বেড়ে যাবে। দেশের মানুষ আশা করেছিল বার্ষিক পরীক্ষাকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি কিছুটা হলেও পরিবর্তন করবে, কিন্তু তা হয়নি। এতে অবশেষে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। আমরা দেখে আসছি অতীতে গণতান্ত্রিক যে কোনো আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে হরতাল দেয়া হতো। তবে ১৯৮০ এর দশক থেকে যে কোনো বিষয়েই সরকারকে চাপে ফেলতে হরতালকে বেছে নেয় রাজনৈতিক দলগুলো।
হরতাল বা সাধারণ ধর্মঘট, অবরোধ কিংবা সম্পূর্ণ অচলাবস্থা, বাংলাদেশের রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের যে কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান হাতিয়ার হরতাল। গত ১ যুগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্যে ব্যাপক উন্নয়নের দিকে এগিয়েছে দেশ। রাজনৈতিক কর্মসূচির পুরনোধারা থেকে বেরুতে না পারলে বাংলাদেশের কাঙিক্ষত উন্নয়ন সাধন কোনো রাজনৈতিক দলের গঠিত সরকারের পক্ষেই সম্ভব না। এজন্য রাজনৈতিক এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।
Leave a Reply