আজ ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

কুমিল্লার তাজুল-নাজমা দম্পতি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সংগ্রামে সফল


অনলাইন ডেস্কঃ জেলার লালমাই উপজেলার শিবপুর গ্রাম। এই গ্রামের এক দম্পতি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সংগ্রামে কাজ করে সফল হয়েছেন।
নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে রয়েছে- কোয়েল, দেশি মোরগ, গরু পালন, জৈব সার উৎপাদন, ধান, সবজি, কলা ও মাছ চাষ, সরিষা সংগ্রহ করে তেল উৎপাদন, নারিকেলের চিড়া, আমসত্ত্ব, কুলের আচার তৈরি। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তা বাজারজাত শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিরাপদ খাদ্য যুদ্ধ নামের পেজ খুলেছেন। সেখানে পণ্যের বিষয়ে তথ্য জানান দেন। ক্রেতা তার পরিমাণ জানালে শহরে হলে সরাসরি ডেলিভারি এবং দূরে হলে কুরিয়ারে পাঠান। গত সাত বছর ধরে নিরাপদ খাদ্যের আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা।
উচ্চশিক্ষিত নাজমা আক্তার ও তাজুল ইসলাম দম্পতির কাজগুলো প্রথম প্রথম স্থানীয়দের কেউ-কেউ পাগলামি বললেও এখন প্রতিবেশীরাও স্বপ্ন দেখেন তাদের মতো হবেন। ওই দম্পতির নিরাপদ খাদ্যের এই আন্দোলন তাদের জীবনে এনেছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

জানা যায়, তাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। লেখাপাড়া শেষে একটি কোম্পানির বড় পদে চাকরি করতেন। তারা থাকতেন চট্টগ্রামে। স্ত্রী নাজমা আক্তার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে চট্রগ্রামের একটি কলেজে চাকরি করতেন। সাত বছর আগের কথা। তাদের মেয়ে তখন ছোট। শহরের পরিবেশ আর খাবার তার সহ্য হতো না। প্রায়ই অসুস্থ থাকত। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, গ্রামে ফিরে যাবেন। নিজেদের জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করবেন। যে ভাবনা, সেই কাজ। ফিরে আসেন শিবপুর গ্রামে। শুরু করেন চাষাবাদ ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন।

সরেজমিনে শিবপুর গিয়ে দেখা যায়, নাজমা ব্যস্ত কোয়েল-মুরগির খামার ব্যবস্থাপনায়। উঠানে গ্রামের নারীরা বসেছেন নারিকেল কুঁচি করতে। তাজুল ইসলাম পণ্য ডেলিভারি দিয়ে এসে বসেছেন তেলের প্যাকেজিং করতে। তাকে সহযোগিতা করছেন নাজমা। নাজমা আক্তার বাসসকে বলেন, স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিই নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের। তিনি দেশের বিভিন স্থানে ঘুরে ভালো পণ্য সংগ্রহ করেন। আমরা যা খাই, তা ভোক্তাদেরও সরবরাহ করি। তাজুল ইসলাম বাসসকে বলেন, নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে আমার স্ত্রীর ভূমিকাই প্রধান। তিনিই প্রথম শুরু করেন। পরে এসে আমি যোগ দিই। আমরা ফার্ম থেকে সরাসরি ভোক্তার হাতে পণ্য তুলে দিই। কোনো মধ্যস্বত্বভোগী নেই। এতে ভোক্তা কম দামে ভালো পণ্য পান। প্রথমদিকে এ কাজে নামলে কিছু প্রতিবেশী হাসাহাসি করতেন। বলতেন- লেখাপড়া করে কামলা হয়েছে। আমরা ভালো করার পর অবশ্য তারাই আবার দেখতে আসেন। নিজে ভালো খাওয়া এবং অন্যকে সরবরাহ করাতে আমাদের অনেক আনন্দ হয়।

এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জোনায়েদ কবীর খান বাসসকে বলেন, এই দম্পতির উদ্যোগ ব্যতিক্রম। তাদের মতো শিক্ষিত উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে কৃষি আরও এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো পণ্য পাবেন।

প্রতিবেদক: কামাল আতাতুর্ক মিসেল
তথ্যসূত্র: বাসস


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর