আজ ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বৃহৎ শক্তি নিষ্ক্রিয় কেন?


অনলাইন ডেস্কঃ মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নিরাপদ প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের। বাংলাদেশে শরণার্থী হওয়ার পর আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে হয়েছে মামলা, রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রত্যাবাসনের আশ^াস দিয়েছিলো অসংখ্য আন্তর্জাতিক সংস্থা। কিন্তু কোথায় যেন সুর কেটে যাচ্ছে বারবার। বিশাল এক জনগোষ্ঠীর বোঝা বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, অন্যদিকে অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বিশ্ব।

মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোনো সফল পদক্ষেপ এখনো আসেনি। যতগুলো বড় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার প্রতিটিতেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে চীন। ভবিষ্যতেও চীন এই সমস্যার সমাধান করতে ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এজন্য যেসব কঠোর পদক্ষেপ ও প্রভাব মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বেইজিংকে নিতে হবে তা চীন চাইবে কিনা সেটিই একটি বড় প্রশ্ন। তাদের মতে, ছোট ছোট পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে অল্প কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর মতো পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এ ধরণের পদক্ষেপের মাধ্যমে চীন আসলে মিয়ানমারের একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মাত্র।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘চীনের ভূমিকাকে ছোট বা বড় করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এটাকে স্বাভাবিকভাবেই দেখতে হবে।’
চীনের মধ্যস্থতায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে তিনটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে, যেগুলোর কোনটিই সফল হয়নি। এছাড়া আরেকটি উদ্যোগ নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গাদের বিষয়ে অতীতে যেমন মতামত দিয়েছিলো বর্তমানে তার ভিন্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অং সান সূচি নেতৃত্ব বহাল থাকলে হয়ত বিষয়টিতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারতো। কিন্তু এক্ষেত্রে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার বর্তমানে একচ্ছত্র ক্ষমতা পরিচালনা করায় বিশে^র শক্তিধর দেশগুলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বোঝা বাংলাদেশের ওপর চাপাতে চাইছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত দ্য ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। ২০১৭ মিয়ানমার সেনা কতৃক রোহিঙ্গাদের প্রতি যে বর্বরতা চালানো হয়েছিলো, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা হয়েছে ওই মামলায়।

এদিকে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গারা পাঁচটি দাবি জানিয়েছে- প্রথমটি হলো রোহিঙ্গারা আরাকানের স্থানীয় আদিবাসী এবং সে জন্য তাদের ন্যাটিভ স্ট্যাটাস বা স্থানীয় মর্যাদা সংসদে আইন করে পুনর্বহাল করতে হবে যার আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত নাগরিকত্ব-আরাকান রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ‘সিটিজেন কার্ড’ দিতে হবে। বাংলাদেশের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও সিটিজেনশিপ কার্ড দিয়ে প্রত্যাবাসন করে স্থানীয় নাগরিক মর্যাদা দিতে হবে।
তৃতীয়ত, একই সাথে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় থাকা রোহিঙ্গাদের সিটিজেনশিপ কার্ড দিয়ে স্থানীয় নাগরিক মর্যাদা দিতে হবে। চতুর্থত, প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজস্ব গ্রামে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া জমিজমা যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দিতে হবে। চতুর্থত নিরাপত্তা আরাকানে রোহিঙ্গাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য রোহিঙ্গা পুলিশ বাহিনীর সাথে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। পঞ্চমত, জবাবদিহিতা- বার্মার স্থানীয় আদালতের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসির মতো কোনো ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনালে অপরাধীদের বিচার করতে হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর