আজ ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

চলে গেলেন কবি মোহাম্মদ রফিক


চাটগাঁর সংবাদ ডেস্কঃ মননশীল আধুনিক কবি মোহাম্মদ রফিক আর নেই। রবিবার (৬ আগস্ট) রাত দশটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এদিন রাতে বরিশাল থেকে ঢাকা ফেরার পথে একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কবি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মোহাম্মদ রফিক দীর্ঘদিন যাবত বার্ধক্যজনিত রোগসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

কবি মোহাম্মদ রফিকের ছাত্রী এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা রনি জানান, কবি মোহাম্মদ রফিকের ছোট ছেলে শুদ্ধস্বত্ব রফিক অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে এসেছিলেন। তাকে নিয়েই কবি বাগেরহাটে নিজের বাড়িতে যান। রবিবার রাতে তিনি বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কবিকে। সেখানে ডাক্তাররা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে রেফার করেন। পরে বরিশাল হাসপাতাল থেকে ঢাকায় আসার সময় পথেই রাত সোয়া ১০টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

অধ্যাপক রনি আরও বলেন, কবির ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, কবিকে ঢাকা আনা হবে না। তার মরদেহ বাগেরহাটে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।

ফারজানা সিদ্দিকা রনি আরও জানান, কবি মোহাম্মদ রফিক তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাফনের কথা বলে গেছেন। এ ছাড়া তার মরদেহ নিয়ে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা না করার নির্দেশও দিয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি জানান, কবির বড় ছেলে শুভস্বত্ব রফিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। হয়তো তার জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত সময়েই কবিকে সমাহিত করা হবে।

মোহাম্মদ রফিক একাধারে কবি, লেখক ও শিক্ষক। তার জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাগেরহাটে। ২০১০ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত এ কবি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ২০০৯ এ অবসরে যান।

মূলত ১৯৬০ এর দশকে কবির আত্মপ্রকাশ ঘটে। পাকিস্তান আমলে ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন ও কবিতায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে মোহাম্মদ রফিকের কবিতা মানুষকে আলোড়িত করেছে।

খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে মাধ্যমিক পাস করেন কবি মোহাম্মদ রফিক। পরে ঢাকার নটর ডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এর পর ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে চলে যান। এ সময় কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়।

মূলত তখন থেকেই সাহিত্যে তার অবস্থা শক্ত হতে থাকে। তিনি ১৯৬০ এর দশকের প্রারম্ভে সমকাল, কণ্ঠস্বর, স্বাক্ষর, অচিরা ইত্যাদি পত্রপত্রিকায় কবিতা লিখতে থাকেন। কবি ১৯৬১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। সে বছরই রাজশাহী সরকারী কলেজে ইরেজিতে অনার্সসহ স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ সময় আইয়ূববিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন। কবিতাও লিখতে থাকেন দুঃশাসন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এক পর্যায়ে সামরিক আইনে তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় সামরিক আদালত। এ সময় দিনের পর দিন পালিয়ে হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। জেলেও যান। প্রেসিডেন্ট আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে থাকার কারণে তাকে বহিষ্কৃত করা হয় রাজশাহী কলেজ থেকে। তারপরও তার কলম থেমে যায়নি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ১নং সেক্টরে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। অংশ নেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও। পরবর্তী সময়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও তার কবিতা একইভাবে প্রেরণা জুগিয়েছে আন্দোলনে। দিয়েছে প্রতিবাদের ভাষা।

১৯৭০ সালে মোহাম্মদ রফিকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমায়’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলার সংসারে এই মাটি’। কবির অন্য কাব্যগ্রন্থগুলো মধ্যে কীর্তিনাশা (১৯৭৯), খোলা কবিতা ও কপিলা (১৯৮৩),গাওদিয়ায় (১৯৮৬),স্বদেশী নিশ্বাস তুমিময় (১৯৮৮), মেঘে এবং কাদায় (১৯৯১), রূপকথা কিংবদন্তি (১৯৯৮),মৎস্য গন্ধ্যা (১৯৯৯), মাতি কিসকু (২০০০), বিষখালি সন্ধ্যা (২০০৩), নির্বাচিত কবিতা (২০০৩),কালাপানি (২০০৬), নির্বাচিত কবিতা (২০০৭), নোনাঝাউ (২০০৮), দোমাটির মুখ (২০০৯), ত্রয়ী (২০০৯), মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী-১ (২০০৯), মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী-২ (২০১০) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।।

কবিতার পাশাপাশি তার রয়েছে বেশ কয়েকটি গদ্যগ্রন্থ। এর মধ্য ভালবাসার জীবনানন্দ (২০০৩), আত্মরক্ষার প্রতিবেদন (২০০১), স্মৃতি বিস্মৃতির অন্তরাল (২০০২) অন্যতম। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান মোহাম্মদ রফিক। এছাড়া আলাওল পুরস্কারসহ (১৯৮১) অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন এই কবি।

তথ্যসূত্র: সিভয়েস২৪


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর