চাটগাঁর সংবাদ ডেস্ক: আইন অনুযায়ী ১৯টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করতে আইনি ব্যবস্থা আরো জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক)। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে মন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
মন্ত্রণালয় ও পাট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ অনুযায়ী ১৯টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক রয়েছে। এসব পণ্যে কেউ যদি প্লাস্টিকের মোড়ক ব্যবহার করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা আরো জোরদার করবেন। দেশব্যাপী সারাবছর অভিযান চলমান থাকলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য কাঁচা পাটের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য লাইসেন্সবিহীন অসাধু ব্যবসায়ীদের কাঁচা পাট ক্রয়-বিক্রয় ও মজুত থেকে বিরত রাখা, ভেজাপাট ক্রয়-বিক্রয় রোধ করা, বাজারে কাঁচাপাটের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পাট অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশের পাট খাতকে সমৃদ্ধ ও আধুনিক করতে সরকারের ধারাবাহিক সময়োপযোগী পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বহুমুখী পাটজাত পণ্য রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি পাটখাতের অংশীজনদের নীতি সহায়তা করা হচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে প্রয়োজনীয় কাঁচাপাট সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির ধারা বেগবান করার লক্ষ্যে সর্বদা পাটের বাজার দর পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। পাট চাষ নিশ্চিতকরণে বীজ সরবরাহ সঠিক রাখার পাশাপাশি কৃষককে অন্যান্য উপকরণ সহায়তার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাটের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে পাটকলগুলো নিরবিচ্ছিন্নভাবে পাট সংগ্রহ করতে পারছে, যা রপ্তানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর পাট মৌসুম শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঁচাপাট বাজারে আসতে শুরু করেছে। এ মৌসুমে কাঁচাপাটের উৎপাদনও সন্তোষজনক। পাটচাষিরা ভালো পাটের ভালো দাম পাবেন। কোন কারণে যেন কাঁচাপাটের দাম অসহনীয় না হয় সেজন্য সর্বদা কাঁচাপাটের বাজার পর্যবেক্ষণ করা হবে।’
এ সময় বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ কফিল উদ্দিন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. মাহমুদ হোসেন, অতিরিক্ত (পাট) তসলিম কানিজ নাহিদা, আকিজ জুট মিলস লি. চেয়ারম্যান শেখ নাসিরউদ্দিনসহ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ অনুযায়ী প্রথমে ছয়টি পণ্য; অর্থাৎ ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ, সরবরাহ ও মোড়কীকরণে পাটের বস্তা বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি এই তালিকায় আরও যুক্ত হয় মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনে, আলু, আটা, ময়দা ও তুষ-খুদ। ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট পোলট্রি ও ফিশ ফিডের মোড়কীকরণে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। আইন অনুযায়ী পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে আইন অমান্যকারীকে শাস্তি হিসেবে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা ও প্রথম আলো
Leave a Reply