আজ ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৯৭১ সালে মার্চ মাস-বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে উঠার গল্প


বঙ্গবন্ধু জীবন একটি ঘটনাবহুল অধিকার আদায়ের সংগ্রামী জীবন। তিনি ছাত্রনেতা থেকে পাকিস্তানের মন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাকি সব ভাষনের চাইতে ৭ ই মার্চের ভাষন ভিন্ন। এবং রাজনৈতিক জীবনে এই ভাষনের গুরুত্ব এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে এই ৭ মার্চের গুরুত্ব অপরিসীম।পাকিস্তান সেনা সরকার এবং তাদের গোয়েন্দা সংস্থা বারংবার চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চালায় যেন কোন ভাবেই জাতির পিতা কোন রকমের স্বাধীনতার ঘোষনা না দিতে পারেন। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু প্রণীত ৬ দফা পাকিস্তান সরকারকে এটা বুঝতে বাধ্য করেছে যে শেখ মুজিবের চাতুরতা কাছে তারা সকলেই ব্যর্থ। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত ভাগ হলো, শরৎ বসু আর মুজিবের নেতা সোহরাওয়ার্দীর শেষ মুহূর্তের আসামসহ একটা অখন্ড বাংলা গঠনের উদ্যোগ ভেস্তে গেল। আবুল হাশেম পন্থী বলে পরিচিত মুসলীম লীগের প্রগতিশীল অংশটা খাজাদের কাছে কোনঠাসা হয়ে পড়লো, তখন শেখ মুজিব বেকার হোস্টেলের একটা কক্ষে কর্মীদের নিয়ে মিলিত হয়ে ছিলেন। তিনি সেদিনই বলে ছিলেন “পাকিস্তান অর্জিত হচ্ছে বটে, কিন্তু আমাদের সংগ্রাম শেষ হচ্চে না, শুরু হচ্ছে “। সাংবাদিক এন্থনি মাসকারনেসের সঙ্গে ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে বালুচ রেজিমেন্টের মেসেও তিনি উত্তেজিত হয়ে বলে ছিলেন, “আমাদের স্বাধীনতা পেতে হবে।আমাদের নিজেদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী থাকতে হবে। ” ৭ই মার্চের আগের দিন বিকেলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ভাষন দিয়ে ছিলেন। নিজের ঘরে শুয়ে বঙ্গবন্ধু ভাষন শুনলেন ইয়াহিয়া সব দোষ দিলেন বাঙ্গলীকে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ পুরো জাতি অপেক্ষায় আছেন স্বাধীনতার ঘোষনার। প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ হাতে বাঁশের লাঠি, লগি, বৈঠা নিয়ে হাজির রেসকোর্স ময়দানে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে এক বাক্যে জানিয়ে দেওয়া হয়, ” They don’t want any declaration of independence right now. ” গতরাতে ইয়াহিয়া ফোন করে বঙ্গবন্ধু কে বলেছিলেন, এখনই যেন মুজিব চুড়ান্ত কিছুর ঘোষণা না দেন। তেমন কিছু হলে পরিনতি হবে ভয়াবহ। অন্যদিকে মানুষ নিজের গতিতে বিস্ফোরনের দিকে এগুচ্ছে। এই নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধু নাগালের বাহিরে চলেই যাবে যদি তিনি মানুষের সময়ে দাবির কথা না বলেন। ছাত্ররা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করে ফেলেছে। ছাতনেতার উনার বাসায় বারবার একই অনুরোধ, “লিডার আমরা কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণার চেয়ে কম কিছু শুনতে চাইনা। ” ৭ ই মার্চে তিনদিন আগে আবুজর গিফারি কলেজের ছাত্ররা মৌচার -মালিবাগের মোড়ে মিছিল করতে গিয়ে গুলিতে মারা গেছে ফারুক ইকবাল। মৃত্যুর আগের এই ছাত্র তার রক্ত দিয়ে রাজপথে লিখে ছিলো “জয় বাংলা ” সমাবেশের মাত্র কিছু সময় আগে আমাদের বঙ্গমাতা, জাতির পিতার সহধর্মিণী রেনু বলে ছিলেন, “গতরাতে গভীর রাত অব্ধি মিটিং করেছেন, সারাদিন কাজের জন্য বিশ্রাম নিতে পারেন নাই। একটু দশটা মিনিট শুয়ে থাকুন “। বিছানার গা হেলিয়ে দিলেন জাতির পিতা, পায়ের কাছে উনার স্ত্রী আর মাথার কাছে কন্যা শেখ হাসিনা। বেগম মুজিব বললেন, “শোনো, তোমার সামনে লক্ষ মানুষ, তোমার পিছনে বন্ধুক। এই লক্ষ মানুষ যেন হতাশ না হয় কারও পরামর্শ শোনার দরকার নাই। তোমার বিবেকের দিকে তাকাও। তোমার মন যা বলবে তাই বলবা। “। বঙ্গবন্ধু উঠে দাঁড়ালেন, রওয়ানা হলেন রেসকোর্সের দিকে। নিরাপত্তার কারনে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার থেকে মিরপুর রোডে না উঠে পশ্চিম দিক দিয়ে রাওয়ানা হোলেন। মানুষের ভিড় ঠেলে মঞ্চে উঠতে খানিকটা দেরি হলো। উনার সামনে ১০ লক্ষ মানুষ। মাঠের বাহিরে সাড়ে সাত কোটি নির্যাতিত বাঙ্গালী। হয়তো সেদিন মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে উনার সহধর্মিণীর সেই কথাই উনার কানে বাজছিল। (তোমার মন যা বলবে তুমি তাই বলবে) । আকাশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভারি মেশিনগান সহ একটি সবুজ হেলিকপ্টার। যেন ধমক দিচ্ছে, যেন শাসাচ্ছে মুক্তিকামী একটি জাতিকে। মুজবি জনতাকে অভিবাদন জানিয়ে মুখ খুললেন, “আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি “। তারসরা জীবনের স্বপ্নের কথা বললেন, ” আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই। ” বললেন যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা,” যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তলো। ” স্বাধীন সোনার বাংলা গড়তে বলে দিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা ” কবি নির্মলেন্দ গুনে ভাষায়, “কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি….. বঙ্গবন্ধু হয়ে গেলেন একটি অত্যাচারিত, পরাধীন, মুক্তিকামী জাতির পিতা। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের রিপোর্টে বলেন, “চতুর শেখ মুজিব নিখুত চতুরতায় বলেই গেলেন আমরা বুঝতেও পারলাম না। ” বঙ্গবন্ধু বঙ্গালীকে ভালোবেসে নিজেকে পিতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন পরম মমতায়। সুকৌশলে মুক্তির স্বাদ দিয়েছেন আমাদের। স্বাধীনতা কতটা মূল্যবান তা আজ হারে হারে টের পাচ্ছে সিরিয়া, ফিলিস্তিন, জুম্ম কাশ্মীর, ইউক্রেন। পিতা তোমায় লাখো সালাম। আবু নাছের জুয়েল সাবেক, স্টুডেন্ট এম্বাসেডর আই.আই.ইউ.সি। সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর