অনলাইন ডেস্কঃ রমজান মাস আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ ফজিলতের মাস। এই মাস সাওয়াব অর্জনের মাস। এ মাসেই কোরআন অবতীর্ণ হয়। রমজান মাসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রহমত, বরকত ও নাজাত।
এ মাসে প্রতিটা আমলে আল্লাহ ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব দেন। এজন্য বিশেষ এই মাসে বেশি বেশি আমল করতে হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল আছে, যেগুলো পালনের মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পেতে পারি।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এই মাসের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি আমল সম্পর্কে-
১. সিয়াম পালন করা
রমজান মাসে সিয়াম পালন ফরজ। সকল আমলের আগে গুরুত্বপূর্ণ সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।’ [সুরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]
সিয়াম পালনের ফযিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার জন্য রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। [সহিহ বুখারি : ২০১৪]
২. সময়মতো নামাজ আদায় করা
পবিত্র এ মাসে সিয়াম পালনের সঙ্গে সঙ্গে সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজের সময় যদি কোনো কাজও আসে তবে সে কাজ পরে করতে হবে। সবার আগে নামাজ পড়তে হবে। নামাজ কখনো কাজের অজুহাত দিয়ে দেরিতে আদায় করা যাবে না। নামাজ বেহেশতের চাবি। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়া যায়।
আর এই রমজান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি জোট বেশি নফল নামাজ আদায় করা যায় তত ভালো।
কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে : ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।’ [সুরা নিসা : ১০৩]
৩. সহিহভাবে কোরআন শেখা
মহানগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়েছে পবিত্র রমজান মাসে। তাই এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহিহভাবে কোরআন তিলাওয়াত করা। যারা কোরআন তিলাওয়াত করতে পারেন না, এই পবিত্র মাসে তারা শিখে নিতে পারেন। আমাদের জন্য কোরআন শিক্ষা ফরজ করা হয়েছে।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ [সুরা আলাক : ১]
৪. অপরকে কোরআন তিলাওয়াত শেখানো
রমজান মাস অপরকে কোরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবিদের কোরআন শিক্ষা দিতেন।
এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি তিনিই, যিনি নিজে কোরআন শিক্ষা করেন এবং অপরকে শিক্ষা দেন।’ [সহিহ আল-বুখারী : ৫০২৭]
৫. সেহরি খাওয়া
সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘তোমরা সেহরি খাও। কেননা, সেহরিতে বরকত রয়েছে।’ [সহিহ মুসলিম: ১/৩৫০]
৬. সালাতুত তারাবিহতে অংশগ্রহণ করা
রমজানের প্রতি রাতে সালাতুত তারাবিহ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবিহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে : ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবিহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ’ [সহিহ আল-বুখারী : ২০০৯]
৭. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা
পবিত্র রমজান কোরআনুল কারিম নাজিলের মাস। এই মাস মহানগ্রন্থ আল কোরআন পড়া ও শেখারও মাস। সাধারণত কোরআন তেলাওয়াতে প্রতি হরফের বিনিময়ে ১০ নেকির ঘোষণা করা হয়েছে হাদিস শরিফে। আর রমজান মাসে সেই ১০ নেকির ওপর আরও ১০ গুন বৃদ্ধি থেকে শুরু করে আল্লাহ তায়ালা যত ইচ্ছা বরকত দান করবেন।
হাদিসে কুদসিতে এসেছে : “রোজা আমারই জন্য। এর পুরস্কার আমি নিজেই দেব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময়ে দশগুণ বৃদ্ধি করব।” (বুখারী শরীফ, ইফা, হাদিস নং ১৭৭৩)
৮. বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা
মানব জীবনে পবিত্র মাহে রমজান মাস পাওয়া নিঃসন্দেহে এক মহাসৌভাগ্যের বিষয়। এ কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা উচিত। বেশি বেশি হামদ ও সানা পাঠ করে মহান মুনিবের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
পাশাপাশি আগামী রমজানের জন্য আল্লাহর নিকট তাওফিক প্রত্যাশা করা। এ বিষয়ক নির্দেশনা আল কোরআনেও এসেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করেন : ‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’ [সুরা আলবাকারাহ : ১৮৫]
৯. কল্যাণকর কাজে বেশি অংশগ্রহণ করা
এ মাসটিতে একটি ভালো কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সে জন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী আহ্বান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরও অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ করো। তুমি কি জান? এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৪
১০. নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা
তাহাজ্জুদ নামাজের রয়েছে বিশেষ ফজিলত। এ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নির্জনে একাকী মহান প্রতিপালকের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে তার নৈকট্যলাভের অন্যতম মাধ্যম। রমজানের বিশেষ ফজিলতের কারণে এ মাসে এই নামাজের জন্য রয়েছে আরও বেশি সাওয়াব ও ফায়দা।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘ফরজ সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত। ’ [সহিহ মুসলিম : ২৮১২]
১১. অধিক পরিমানে দান-সদাকাহ করা
পবিত্র মাহে রমজানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মাসের থেকে দান সদকা বাড়িয়ে দিতেন। আমাদেরও উচিত পবিত্র এই মাসে বেশি বেশি সদকা করা। যাকাত যাদের ফরজ তারা অবশ্যই জাকাত আদায় করে থাকেন।
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমজানে তাঁর এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত। ’ [সহিহ আল-বুখারী : ১৯০২]
১২. উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা
রমজান মাস চরিত্র গঠনের মাস। আত্মশুদ্ধি, আত্মোপলব্ধি এবং আত্মোন্নয়নের মাস। এ মাসে চারিত্রিক উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। এমনভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে, যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো পরিচালিত হয় সুন্দরভাবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোজা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সঙ্গে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে, সে যেন বলে, আমি রোযাদার।’ [সহিহ মুসলিম : ১১৫১]
১৩. ইতিকাফ
মাহে রমজানের অন্যতম আমল ইতিকাফ। ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষজনের কোলাহল থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কোরআন তিলাওয়াত, দুয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : ‘প্রত্যেক রমজানেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমজানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন। দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নাত।’ [সহিহ আল-বুখারী : ২০৪৪]
১৪. দাওয়াতে দ্বীনের কাজে অংশগ্রহণ করা
মাহে রমজান উত্তম আমলের মাস। আর দ্বীনের দাওয়াত এমনিতেই উত্তম একটি আমল। দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ তাআলার দিকে ডাকা হয়। বিপথগামী বান্দাহকে মহান স্রষ্টার দিকে ডেকে আনা।
আল কোরআনের ঘোষণা : ‘ওই ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহ তাআলার দিকে ডাকল, নেক আমল করল এবং ঘোষণা করল, আমি একজন মুসলিম।’ [সুরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩]
১৫. ওমরাহ পালন করা
মাহে রমজানে একটি ওমরাহ করলে একটি হজ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘রমজান মাসে ওমরাহ করা আমার সঙ্গে হজ আদায় করার সমতুল্য। ’ [সহিহ আল-বুখারী : ১৮৬৩]
আরও পড়ুন সেহরি ও ইফতার: ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রজ্ঞাপন
১৬. শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করা
পবিত্র মাহে রমজানে এমন বরকতময় একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল কোরআনে আছে- ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ [সুরা কদর : ৪]
মহিমান্বিত এ রজনী পাওয়া বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদিসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ’লা আনহা বলেন : ‘রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন।’ [সহিহ মুসলিম : ১১৭৫]
১৭. বেশি বেশি দুআ করা এবং আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করা
হাদিসে বলা হয়েছে- 'আদ্দুআউ মুখখুল ইবাদাহ', অর্থাত, দুআ ইবাদাতের মগজ। দুআ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দুআ করা ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করে প্রার্থনা করা।
হাদিসে এসেছে: ‘ইফতারের মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।’ [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]
১৮. ইফতার করা
মাহে রমজানে ইফতারির সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা বিরাট ফজিলতপূর্ণ আমল। এক্ষেত্রে কোনো সময়ক্ষেপণ না করেই ইফতার করতে হবে।
হাদিসে এসেছে : ‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র। ’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহিহ]
১৯. রোজাদারদের ইফতার করানো
রোজাদারদের ইফতার করানো অনেক সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজন রোজাদারকে ইফতার করানোর চেষ্টা করতে হবে।
হাদিসে এসেছে : ‘যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ [সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহিহ]
২০. তওবা ও ইস্তেগফার করা
'তওবা' শব্দের আভিধানিক অর্থ- 'ফিরে আসা', পারিভাষিক অর্থে- 'আল্লাহ তাআ’লার কাছে গুনাহের জন্য লজ্জিত হয়ে বিনীতভাবে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় উক্ত গুনাহের কাজ আর কখনো না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া'। পবিত্র রমজান মাস তওবা করার উত্তম সময়। তওবাকারীকে আল্লাহ পাক ভালোবাসেন।
আল কোরআনে আছে- ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ নবী এবং তার বিশ্বাসী সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানদিকে ছুটোছুটি করবে। তারা বলবে- হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর ওপর সর্ব শক্তিমান। ’ [সুরা আত-তাহরীম : ৮]
২১. তাকওয়া অর্জন করা
তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমজান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম।
কোরআনে এসেছে: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পার।’ [সুরা আলবাকারাহ : ১৮৩]
২২. ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা
ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহ করার প্রতিদান পাবে। [সুনান আত-তিরমিযী : ৫৮৬]
২৩. ফিতরাহ দেওয়া
এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেওয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাজ আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। [সহিহ আল-বুখারী :১৫০৩]
২৪. অপরকে খাদ্য খাওয়ানো
রমজান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ ।
কোরআনে এসেছে: ‘তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে।’ [সুরা আদ-দাহর: ৮]
২৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা
আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞা করে থাক এবং আত্মীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।’ [সুরা আন-নিসা: ১]
২৬. কোরআন মুখস্থ বা হিফজ করা
কোরআন হিফজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজেই কোরআন হিফজের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কোরআন হিফজ করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন।
কোরআনে এসেছে : ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী।’ [সুরা আল-হিজর: ৯]
২৭. বেশি বেশি জিকির করা
এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘আল্লাহ তাআলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন। সেগুলো হলো- যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হয়’। [মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]
২৮. মেসওয়াক করা
মেসওয়াকের প্রতি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসে এসেছে : অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। [সহিহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫]
২৯. কোরআন শুনানো
রমজান মাসে একজন অপরজনকে কোরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে : জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমজানের প্রতি রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল তাঁকে কোরআন শোনাতেন। -[সহিহ আল-বুখারী : ১৯০২]
৩০. কোরআন বোঝা ও আমল করা
কোরআনের এ মাসে কোরআন বোঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কোরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কোরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে :‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাজিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’। [সুরা আল-আরাফ : ৩]
তথ্যসূত্র: কালবেলা