আজ ১৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছবি: সিসিসিআইয়ের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ

কঠোর করনীতি প্রত্যাহারসহ বেসরকারি খাত উন্নয়নে ১২ প্রস্তাব চেম্বার সভাপতির


অনলাইন ডেস্কঃ প্রাক বাজেট আলোচনায় কঠোর করনীতি প্রত্যাহারসহ বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে এবং সেগুলোর উন্নয়নে ১২টি প্রস্তাব দিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে চট্টগ্রামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রস্তাবনাগুলো উত্থাপন করেছেন তিনি। সম্প্রতি আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হল এ চট্টগ্রাম চেম্বার এবং হোটেল আগ্রাবাদে মেট্রোপলিটন চেম্বারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

এনবিআর আয়োজিত এ দুটি পৃথক সভায় বাজেটকে ব্যবসাবান্ধব ও শিল্পবান্ধব করতে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিষয়ে মোট ১৮০টি প্রস্তাব দিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। এসময় লিখিত বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি কয়েকটি কঠোর করনীতি প্রত্যাহার ও বাজেট প্রস্তাবনা উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও ২০ শতাংশে উন্নীত করা। সেক্ষেত্রে এর বর্তমান রেশিও ৮ শতাংশ। এটি দ্রুত বৃদ্ধি করতে যে রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নের দিকে এনবিআর এগুচ্ছে তার চাপ বেসরকারি খাতের সব ব্যবসায়ীরা এখনও নিতে সক্ষম নয়। তাই তিনি ট্যাক্স টু জিডিপি বাড়াতে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বারোপ করেছেন। এরমাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট ট্যাক্সদাতার ওপর করের বোঝা না বাড়ার পাশাপাশি করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন চট্টগ্রামে লাইফস্টাইল এক্সপো, উদ্বোধন করবেন চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ

ওমর হাজ্জাজ জানিয়েছেন, বেসরকারি কোম্পানীর ট্যাক্স কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে এটি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো সেকশন-৫৫ এর অগ্রহণযোগ্য ব্যয় এবং সেকশন-১৬৩ এর আওতায় গ্রহণযোগ্য আয় প্রকৃত আয়ের তুলনায় বেড়ে যাওয়া। এছাড়া আরো যেসব কঠোর করনীতির কথা তিনি উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো-উচ্চহারে টিডিএস ও ভ্যাট; কাস্টমসের নিজস্ব নিয়মে পণ্যের উচ্চমূল্য নির্ধারণ ও শুল্ক ধার্য; এইচএস কোড নিয়ে জাটিলতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে এসআরওতে এইচএস কোড অমিল থাকা অথবা এসআরওতে থাকলেও শুল্কমুক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা; অনিচ্ছাকৃত ভুলকে মিসডিক্লারেশন ঘোষণা দিয়ে কাস্টমস কতৃক ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ পেনাল্টি ধার্য; রিফান্ড প্রসেসে ধীরগতি ও জটিলতা; বছরে বছরে অডিট ও হয়রানি; সেকশন ১১৯ এর অধীনে বিদেশি ঋণের সুদের ওপর ২০ শতাংশ ট্যাক্স; সেকশন ৫৩ অনুযায়ী সিস্টার কোম্পানীগুলোর ঋণের সুদ নিয়ন্ত্রণ; সাপ্লাই চেইন ও অন্যান্য ছোট-বড় সকল ব্যবসা অংশীদার থেকে বাধ্যতামূলক পিএসআর সংগ্রহের চাপ; বেসরকারি এম্পøয়ীদের ফান্ড যেমন প্রভিডেন্ট, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকেও ট্যাক্স কর্তন; মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও ডিভিডেন্ট এর হাই ট্যাক্স। ওমর হাজ্জাজ বলছেন, এত ধরনের অতিরিক্ত করদায় মেটানোর পরও ব্যক্তি করদাতার সম্পদ ৪ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বা ৮হাজার স্কয়ার ফিটের অধিক গৃহসম্পত্তি অথবা দুটি গাড়ি থাকলে প্রদেয় করের ওপর ক্ষেত্রবিশেষে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। বাস্তবে করোনাকালীন মহামারির পর থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল দেশের প্রাইভেট ও পাবলিক সেক্টর এখনও অবধি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার কারণ হলো নীতিগত জটিলতার কারনে মহামারি চলাকালীন সময়ে সরকারি সহায়তা সকল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত পৌঁছায়নি।

চলতি অর্থবছরের বাজেটের জন্য চেম্বার সভাপতি যে ১২টি প্রস্তাব দিয়েছেন সেগুলো হলো-সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করা। পরবর্তী ৪ লাখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, এরপর পর্যায়ক্রমে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, এবং ২০ লাখের ক্ষেত্রে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ আর তদুর্ধ্ব অবশিষ্ট টাকার ওপর ২৫ শতাংশ করারোপের পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। এভাবে করহার অল্প বাড়িয়ে ধাপগুলো পুনর্বন্টন করলে মধ্যম আয়ের করদাতাদের মুদ্রাস্ফিতির চাপ কিছুটা হলেও সহনীয় হবে এবং ব্যক্তিগত ট্যাক্স লায়াবেলেটি কিছুটা কমালে নতুন করে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি করদাতা রিটার্ন দিতে উৎসাহিত হবেন বলে মন্তব্য করছেন চেম্বার সভাপতি। এছাড়া টিডিএস ভিডিএস বিধান রহিত এবং একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টিডিএস এর আওতায় বহির্ভূত রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন ওমর হাজ্জাজ। তিনি বলছেন, আগামি ২ থেকে তিন বছরের মধ্যে টিডিএস ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ কমিয়ে রহিত করা জরুরি, এজন্য আসন্ন বাজেটে টিডিএস এর নতুন ধাপ প্রস্তাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রথম ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ২ দশমিক ৫ শতাংশ, ১ কোটি থেকে ৩ কোটি পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তিন কোটির উপরে সর্বোচ্চ হার হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ভ্যাটহার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার সুপারিশ করে আরেকটি প্রস্তাবে তিনি উল্লেখ করেছেন সর্বোচ্চ ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ নির্ধারণ এবং সর্বনিম্ন ভ্যাট ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশে উন্নীতকরণ; এছাড়া ভ্যাটের ক্ষেত্রে ইনপুটের কোনো নেগেটিভ লিস্ট না রাখা এবং ইনভয়েস জেনারেশনকে ডিজিটাল করা এবং মূসক ভেরিফিকেশন করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তাছাড়া ট্যাক্সের মতো ভ্যাটের প্রথম আপিলের ক্ষেত্রে দাবীকৃত করের ওপর ২০ শতাংশ টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম প্রত্যাহার; ট্যাক্স এবং ভ্যাটের অডিট প্রক্রিয়া সহজীকরণ; পিএসআর সার্টিফিকেট সংগ্রহ বাধ্যতামূলক থেকে ধাপে ধাপে শিথিল এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ণ রহিতকরণ; ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের নিয়মানুযায়ী পণ্যমূল্যের কাস্টমস ভ্যালুয়েশন ও অ্যাসেসমেন্ট নিশ্চিতকরণ; বিনিয়োগ প্রসারে ধারা ১১৯ এর অধীনে বিদেশি ঋণের সুদের ওপর উৎসে কর কর্তন বাতিল এবং ধারা ৫৩ এর অধীনে সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণের সুদের পরিমাণ নিয়ন্ত্রন না করা; রিফান্ড প্রক্রিয়া সহজ করে সম্পূর্ণ অটোমেটেড পদ্ধতিতে দ্রুত সম্পন্ন করা; এনএসডাব্লিউ এর আওতায় কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স, ভ্যাট, কাস্টমস অনলাইন সিস্টেম ইফেক্টিভ করার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর