আজ ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাজারি গলিতে ইসকনের হামলা এবং পুলিশের উপর এসিড নিক্ষেপ


আজাদ চৌধুরী

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকনকে নিয়ে দেয়া একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে নগরীর হাজারি গলি এলাকায় তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। কুরুচিপূর্ণ পোস্টের অভিযোগ এনে কয়েক হাজার ইসকন সমর্থকসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উক্ত পোস্টকারীর দোকানে হামলা ও ভাংচুর চালায়।

তারা উক্ত ব্যবসায়ীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীসহ যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উক্ত যুবককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।

পুলিশ জানায়, ইসকন সদস্যরা তাদের উপরও এসিড নিক্ষেপসহ হামলা চালিয়েছে। এসিডে কোতোয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ যৌথবাহিনীর মোট ১৩ জন সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

যাছাই বাছাই শেষে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে জানিয়ে পুলিশ বলেছে, পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। সাম্প্রদায়িকতার আড়ালে বড় ধরণের ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব‍্য করে, তারা সকলকে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে বলেও যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

কোতোয়ালী থানা পুলিশ জানিয়েছে, কিছুদিন আগে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার প্রোফাইলে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করেন। সেখানে ইসকন নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য ছিল। ফটোকার্ড সম্বলিত সেই পোস্ট কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ঘুরছিল। একদিন আগে এটি নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করেন হাজারি গলির মিয়া শপিং সেন্টারের একটি দোকানের মালিক।

ওই ফেসবুক পোস্টের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ইসকন সদস্য এবং সমর্থকসহ বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী পোস্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।

কোতোয়ালী থানা পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে ইসকন সমর্থকসহ ৫ থেকে ৭ হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী উক্ত মার্কেটে চড়াও হন। তারা “জয় শ্রী রাম”সহ বিভিন্ন ধরণের স্লোগান দিয়ে দোকানটিতে হামলা ও ভাংচুর চালায়।

তারা ওই দোকানের মালিক ফেসবুকে পোস্টকারী যুবকের উপর হামলা ও মারধরের চেষ্টা করেন। তারা উক্ত যুবককে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন এমন খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মার্কেটের গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।

থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, আমরা উত্তেজিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে উক্ত যুবকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কোন কথা না শুনে উল্টো হামলার চেষ্টা চালায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা যৌথবাহিনীকে খবর দিই। যৌথবাহিনী আমাদের সাথে যোগ দেয়। ওই সময় মার্কেট ঘিরে প্রচুর লোকজন জড়ো হতে থাকে। তারা উত্তেজনাপূর্ণ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে হামলার চেষ্টা করলে আমরা লাঠিচার্জ করি। এতে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে আমরা ওই যুবককে থানায় নিয়ে আসি।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, আমরা ওই যুবককে নিয়ে চলে আসার সময় পেছন থেকে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়। বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকে পুলিশসহ যৌথ বাহিনীর উপর ইট পাটকেলের পাশাপাশি এসিড নিক্ষেপ করা হয় বলেও কোতোয়ালী থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানিয়েছেন।

এতে ৬ জন সেনাসদস্য এবং কোতোয়ালী জোনের এসিসহ ৭ পুলিশ সদস‍্য গুরুতরভাবে আহত হন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। যৌথ বাহিনীর টাস্কফোর্স-৪ চট্টগ্রাম থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ জানায়, পরবর্তীতে পুলিশসহ যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ঘটনার ব্যাপারে মামলা রুজু করা হবে বলে উল্লেখ করে পুলিশ জানায়, ফেসবুক পোস্টকারী যুবকের বিরুদ্ধেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অপরাধে মামলা হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে যৌথবাহিনী বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ‍্য পেয়েছে। এটি কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের কাজ নয়। বড় একটি লক্ষ্য নিয়ে একটি চক্র কাজ করছে বলে যৌথবাহিনী সূত্র জানিয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে। এ বিষয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ইসকন নিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করা একটি পোস্টের প্রেক্ষিতে এক ব্যবসায়ীকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে।’

পুলিশের উপর এসিড নিক্ষেপসহ হামলা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ বলেন, ইসকন সমর্থকেরা পুলিশসহ যৌথবাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছেন।

রাতে শেষ খবরে জানা গেছে যে, পুরো এলাকা যৌখবাহিনী ঘিরে রেখেছে। এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

পুলিশ বলেছে, ফেসবুক পোস্টের মতো একটি ঘটনাকে পুঁজি করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাচ্ছে। এ ব্যাপারে সকলকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর