সেনা সরকারের সঙ্গে গণতন্ত্রপন্থীদের সংঘাতে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে নানামুখী উত্তেজনার মধ্যেই দেশটির রাখাইন প্রদেশে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছে চীন। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দেশটির পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি চীন-মিয়ানমার অর্থনেতিক করিডোর (সিএমইসি) প্রকল্পের অংশ। চীনের এ পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রমাণ হয়, সেনা অভ্যুত্থানে আগত জান্তা সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে চীন তাদের প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিচ্ছে।
গত ১০ অক্টোবর মিয়ানমারে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত চেন হাই এবং জান্তা সরকারের বিদ্যুৎ উপমন্ত্রী ড. অং জেয়া এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। এটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গ্যাস চালিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ১৩৫ মেগাওয়াট। প্রকল্পটি চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়না রিসোর্সেস এবং মিয়ানমারের সুপ্রিম গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চীন মিয়ানমারে প্রধান বিনিয়োগকারী একটি দেশ। মিয়ানমারে যেসব প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত মহাসাগর বঙ্গোপসাগরে সহজে প্রবেশ করা যাবে সেসবে প্রকল্পকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে চীন। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বেইজিংয়ের রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
চীন-মিয়ানমারের ১৭শ কিলোমিটার দীর্ঘ অর্থনৈতিক করিডোর দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের সঙ্গে মিয়ানমারের যোগসূত্র স্থাপন করবে। অর্থনৈতিক করিডোরটি প্রথমে মিয়ানমারের মধ্য মান্দালয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে। পরে পূর্বদিকে ইয়াঙ্গুনের দিকে অগ্রসর হবে এবং পশ্চিমে তা চলে যাবে রাখাইনের কিউকফিউ অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যন্ত।
চীনা রাষ্ট্রদূত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চীন-মিয়ানমারের মধ্যে সফল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নিদর্শন। দুদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক আরও জোরদার করতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে’।
বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ক্রমেই চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্পে চীনের সহায়তা নিচ্ছে দেশটি। এসব প্রকল্পগুলোর সুবিধা পাবে রাখাইন থেকে শুরু করে উত্তরে কাচিন পর্যন্ত বিশাল অঞ্চল। ক্ষমতাচ্যুত ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সরকারের অধীনে চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
এনএলডির নেতা অং সান সুচি বর্তমানে জান্তা সরকারের বিচারের মুখোমুখি হয়ে কারাগারে বন্দী আছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জান্তা সরকার ক্ষমতা নেয়ার পরই সুচিকে বন্দী করা হয়। পরে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হয়, যেটি দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হচ্ছে।