ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের মানুষ ইতিবাচক ধারার রাজনীতি প্রত্যাশা করেছিল। তবে সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে রাজনৈতিক বিভাজন জোরালো হচ্ছে। এতে করে দেশ সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশ বাঁচাতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা না গেলে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে গোটা জাতিকে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর পরিবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে সংঘাতমুখী রাজনৈতিক মতপার্থক্য এড়িয়ে জাতীয় ঐক্য গড়তে করণীয়- শীর্ষক সভায় বক্তারা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আল মাহমুদ হাসান এর সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহ। সভায় বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে গত ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার প্রসঙ্গ। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে নেয়া নানা উদ্যোগের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলোও বক্তব্যে উঠে আসে। আগামী দিনে দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ানোর পরামর্শও এসেছে মতবিনিময় সভায়। দলের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহ বলেন, ৩৬ জুলাই তথা ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের মধ্যে ইতিবাচক ধারার রাজনীতি করেন এমন নেতাকর্মীসহ পুরো দেশবাসী নতুন আশা ও সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখেছিল।
ড. ইউনুসকে প্রধান করে অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হওয়ায় সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এমনটাই ধরে নিয়েছিলো সবাই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কয়েকমাস যেতে না যেতে স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে যেতে বসেছে দেখে দেশবাসী চরম হতাশ ও আতংকিত। কারণ ইতিমধ্যে সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার দেশি-বিদেশি চক্রান্ত যেমন চলছে, তেমনি সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও কিছু কিছু কর্মকাণ্ড এই হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ড. ইউনূস যদি ব্যর্থ হন তাহলে দেশের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকরা জাতীয় ঐক্য গড়ে সতর্ক থাকলে আন্তর্জাতিক কোনো চক্রান্ত সফল হবে না। কর্ণেল যোবায়ের বলেন, এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টাকে হতে হবে সাহসী ও কৌশলী। পাশাপাশি উপদেষ্টাদের শতভাগ সৎ রেখে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ফর্মূলা অনুযায়ী দেশ চালাতে পারলে দেশের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী বলেন, আওয়ামীলীগ আমলের মতো এখনও বিভাজনের রাজনীতি চলছে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার লুটপাটের স্রোত কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হলেও সেটা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নয়। অথচ দেশবাসীর প্রত্যাশা মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ কিংবা সিঙ্গাপুরের লিডার লি কুয়ান ইউ’র মতো ড. ইউনূসও সফল হবেন। মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী বলেন বিভাজনের রাজনীতির সুযোগে শেখ হাসিনার পতনে খুশি হওয়া মানুষের সংখ্যা কমছে। ড. ইউনুস ব্যর্থ হচ্ছেন এমন ধারণা তাদের মনে জোরালো হচ্ছে।
এতে কট্টর হাসিনাপন্থীরা অতীতের মতো সাহসী হয়ে উঠছেন। অন্যদিকে এতদিন কোণঠাসা হয়ে থাকা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলেও তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে।বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যে ভাটা পড়েছে। গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ঐক্য শিথিল হয়ে পড়ছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। এই বিভাজন দিনদিন প্রকট হচ্ছে। এটা অশনি সংকেত। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু অন্যের মতকে ফ্যাসিবাদের মত দমন করে সবাই ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠলে তা মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে। জাতীয় ঐক্য থাকবে না। জাতীয় ঐক্য না থাকলে দেশ অখণ্ডতাও হারাতে পারে। বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান আলহামরা নাসরীন হোসেন লুইজা অভিযোগ করে বলেন, সকল মতপার্থক্য অক্ষুন্ন রেখে সর্বজনীন বিষয়ে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে অন্তর্র্বতী সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিষয়ে সেনাপ্রধান ও তাঁর বাহিনী এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের একটি বড় অংশ ত্রুটির মধ্যেও ঐক্যের পক্ষে বেশ কিছু কাজ করছে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করার পাশাপাশি আওয়ামীলীগের পক্ষেও নানা কথা বলছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে বলা সবার কথাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে যোগ্য ও সৎ ব্যাক্তিদের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সব পক্ষের যে কোনো ধরণের অন্যায়-অনিয়মের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বনের পাশাপাশি অন্তর্র্বতী সরকারকে ব্যর্থ বানাতে তৎপর দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর হস্তে দমনপূর্বক আওয়ামীলীগ, বিএনপি -জামায়াত, অন্যান্য দলসহ পুরো দেশবাসীকে সাথে নিয়ে সবার মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে হবে। সভায় শহীদ আসাদ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ডা. নুরুজ্জামান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি কর্ণেল মিয়া মশিউজ্জামান, গণফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আলী শেখ, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক এসজি কিবরিয়া দিপু, কর্ণেল জাকারিয়া হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস, ডা ওয়ালিউর রহমান, মো. আসাদুজ্জামান, শরীফুল হক জুয়েল, মেজর রেজাউল হান্নান শাহীন, আবু রায়হান মো.মাহবুবুল ইসলাম, হানিফ বাংলাদেশী, থোয়াই চিং মং শাক, মাওলানা ওবায়দুল হক, হারুনুর রশিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
Leave a Reply