এস. এ. নয়ন, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের পূর্ব-পশ্চিম খুরুশিয়া গ্রামে আজ সোমবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে । এতে দুই গ্রামের শতাধিক মানুষ ঈদের জামায়াতে অংশগ্রহণ করছেন এবং সকাল ৯ টায় পশ্চিম খুরুশিয়াস্থ দরবারের খানেকা শরীফের মাঠ প্রাঙ্গণে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিম খুরুশিয়ার সাইরে বাপের টিলা এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এখানে চন্দনাইশস্থ জাঁহাগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন।
মো. ফরিদ মিয়া নামে দরবারের একজন অনুসারী চাটগাঁর সংবাদ কে বলেন, সারাবিশ্বে একই তারিখে ঈদ ও রোজা পালনে শরীয়তের বিধান মেনে আমরা প্রতিবছর ঈদসহ যাবতীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে থাকি। এভাবে মমতাজিয়া দরবার ও মির্জাখীল দরবার শরীফের লাখো-কোটি অনুসারী ২৫০ বছর ধরে ঈদ পালন করে আসছে। আমরা এখানে ২০০৫ সাল থেকে পালন করছি।
আরেকজন অনুসারী বলেন, হানাফী মাযহাবের মতানুযায়ী, পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখার সংবাদের ভিত্তিতে ঈদ উদযাপন করা যায়; এ যুক্তিতে ঈদ-উল-ফিতর পালন করছি। তবে এ ব্যাপারটা ইমামে আজম আবু হানিফার সময়ে পালন অসম্ভব ছিলো কারণ তখন আরেক শহরের খবর আসতো না। এখন তো বিশ্বের এক প্রান্তের খবর মুহূর্তের মধ্যে পাই। নতুন চাঁদ দেখার খবরও এখন ইন্টারনেট, ফেসবুক ও মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। মোবাইলেও সহজে জানা যায়। তাছাড়া জ্যোতির্বিজ্ঞানের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে নতুন চাঁদ উদয়ের আগাম খবর জানা যায়। এখন আর কোন ওজর নেই। তাই ইমাম আবু হানিফার কথা অনুযায়ী অবশ্যই ঈদ পালন করতেছি। আর চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা থাকতে পারেন, তা আমলযোগ্য নয়। তাই আমরা আজ আমরা ঈদ পালন করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দনাইশস্থ জাঁহাগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের পীরজাদা মো. মতি মিয়া মনচুর চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, আমাদের দরবার শরীফের অনুসারীরা হানাফি মাজহাবের মতে বিশ্বের যে কোনো দেশে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে প্রায় দুইশত পঞ্চাশ বছর পূর্ব হতে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাসহ সকল মুসলিম ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার (২ মে) আমাদের দরবার শরীফের অনুসারীরা দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৬০ গ্রামসহ সারাদেশে সহস্রাধিক গ্রামে ৩০ রোজা সম্পন্ন করে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। ইতোমধ্যে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশে গতকাল ঈদের চাঁদ দেখা গেছে।
তিনি বলেন, সারাবিশ্বে রমজান মাস শুরু হয়ে গেলেও বাংলাদেশে তা এক বা দুইদিন পর শুরু হয়। তেমনিভাবে সারা বিশ্বে যেদিন ঈদ হচ্ছে, বাংলাদেশে সেই দিন রোজা হচ্ছে। ইসলামী শরীয়ত তথা কুরআন-সুন্নাহ আলোকে ১৯৮৬ সালে ওআইসি মুসলিম বিশ্বের ৫৭টি দেশের স্থায়ী সদস্যদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ‘কোন একটি দেশে নতুন চাঁদ দেখা প্রতিষ্ঠিত হলে সকল মুসলিমকে অবশ্যই সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। নতুন চাঁদের উদয়ের স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয়, কারণ রোজা শুরু ও শেষের নির্দেশটি বিশ্বের সকলের জন্য প্রযোজ্য। নতুন চাঁদ দেখা, গ্রহণ করা আবশ্যিক। তবে এ ক্ষেত্রে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।