এস. এ. নয়ন, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধিঃ রাঙ্গুনিয়া থেকে ‘ফুলঝাড়ু’ যাচ্ছে দেশে-বিদেশে, হচ্ছে রাজস্ব আয়।
রাঙ্গুনিয়ার ইছামতী নদীর তীরে ফুলঝাড়ু পরিচর্যায় ব্যস্ত ব্যবসায়ী আকতার হোসেন।
ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে জুড়ি নেই পাহাড়ি ‘ফুলঝাড়ু’র। গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর বন্দরের প্রায় সর্বত্রই রয়েছে এর কদর। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় এটিকে ‘উলুফুল’ হিসেবে চেনে সবাই। আর সমতলবাসীদের কাছে ‘ফুলঝাড়ু’ হিসেবে পরিচিত। চাহিদা বেশি থাকায় ফুলঝাড়ু পাহাড়-পর্বত ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জানুয়ারি-এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড় থেকে স্থানীয় নারী ও পুরুষরা এ ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসে বিক্রির উদ্দেশ্যে। জুমে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার কৃষি পণ্যের সঙ্গে এই ফুলঝাড়ু হয়ে ওঠেছে তাদের বাড়তি উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। অনেকেই এখন ফুলঝাড়ু উৎপাদন ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে দিন দিন এ পেশায় পাইকার ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও বাড়ছে।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যবসায়ীরা ফুলঝাড়ু সারিবদ্ধভাবে রেখে রোদের মধ্যে বিছিয়ে রেখেছেন শুকানোর উদ্দেশ্যে।
রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট বাজারের ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ী মো. আকতার হোসেন চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘বিশ বছরের অধিক সময় ধরে আমি এই ফুলঝাড়ু ব্যবসার সাথে জড়িত। রাঙ্গামাটি, রাজস্থলী, পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করি। শীতের একটু আগে এবং শীতের শেষে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে ১৫-২০ দিন রোদে শোকানোর পর গুদামজাত করি। এগুলো ছয় মাস, এক বছর পরও বিক্রি করা যায়। এক ট্রাক ফুল ঝাড়ুর বিক্রি করে আমাদের ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ হয়।
তিনি আরও বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার পর ১৫-২০ দিন রোদে শুকানোর কাজে দুই থেকে তিনজন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। দৈনিক ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা পারিশ্রমিক দিতে হয় তাদের। ১৫-২০টি ফুলঝাড়ু দিয়ে একটি আটি বেঁধে ৮০-১০০ টাকা বিক্রি করি। আমাদের ফুলঝাড়ু দেশের সব অঞ্চলে যায়।
রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন বাজারের কয়েকজন ফুলঝাড়ু ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, বাণিজ্যিকভাবে ফুলঝাড়ুর সুফল দেখে অনেকেই নিজের অব্যবহৃত টিলা-পাহাড়ে ফুলঝাড়ু আবাদে সম্ভাবনা দেখছেন। পাহাড়ের মাটি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা ফুলঝাড়ুর মাধ্যমে বদলে যেতে পারে প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রাও।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফুলঝাড়ু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাতে গিয়ে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়। এর ফলে লাভ অনেকটা কম হয়।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ঢালে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো এই ফুলঝাড়ু এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশর নানা প্রান্তে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি বিদেশে ও হচ্ছে রপ্তানি। তাছাড়া ফুলঝাড়ু সংগ্রহ ও বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করতে পেরে খুশি ব্যবসায়ীরা।
পাহাড়ের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলা এই ফুলঝাড়ু সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো পরিসংখ্যান, তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ আর পরিচর্যা করা গেলে পাহাড়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে এ প্রাকৃতিক সম্পদটি- জানালেন কৃষি ও বন কর্মকর্তারা।
রাঙ্গুনিয়া বন কর্মকর্তা মাসুম কবির বলেন, ‘পাহাড় থেকে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ থেকে শুরু করে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত বহু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। লাভজনক এ ব্যবসা থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে। এই মৌসুমে রাজস্ব গেলো বছরকে ছাড়িয়ে যাবে বলেও মনে করি। ছোটখাটো সিএনজি, অটোরিকশা গাড়ি করে নেওয়া ফুলঝাড়ু থেকে রাজস্ব আদায় করা হয় না। বড় ট্রাক বা ছোট ট্রাক থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, প্রতি ফুলঝাড়ুর ব্রোম ৩৫ পয়সা করে রাজস্ব সরকারের ফান্ডে জমা হয়। যার হিসেবে প্রতিটি ট্রাকে আমরা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত রাজস্ব সরকারের তহবিলে জমা দিচ্ছি।
পোমরা ইউনিয়নের সৌদিয়া গেইট রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ খন্দকার আরিফুল হক বলেন, ‘ফুলঝাড়ু রাঙ্গামাটি, রাজস্থলী, পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসার সময় রাজস্ব আদায় শেষে পাস নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। আমরা এই বিটে শুধু দেখি পাস নিয়েছে কি না। এখানে অর্থের কোন প্রকার লেনদেন হয় না।’