সোহেল রানা, রাউজান প্রতিনিধি :
চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে সীমানাপ্রাচীরঘেরা মাঠের এক পাশে তিনতলা ভবন। ২০১৩ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয় ভবনটির। শেষ হয় ২০১৭ সালে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সাত বছর পার হলেও প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি চালুই হয়নি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে শেখ কামাল কমপ্লেক্স নামে এ ভবন নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অধীনে। এই কমপ্লেক্সে রয়েছে দুটি মিলনায়তন, একটি গ্রন্থাগার ও রেস্ট হাউস। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জনবল নিয়োগ না হওয়ায় ভবনটি কাজে আসছে না।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, যে জায়গায় ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি আগে পুকুর ছিল। জায়গাটির মালিকানা সড়ক ও জনপথের (সওজ)। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ইচ্ছায় সেখানে কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। যদিও কাজ শেষ করতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময় লেগেছে। ২০১৮ সালে ভবনটি জেলা পরিষদকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
প্রকল্প অনুযায়ী, মিলনায়তন দুটি সভা-সমাবেশ ও সেমিনার আয়োজনের জন্য ভাড়া দেওয়ার কথা। গ্রন্থাগারটিও করা হয়েছে সাধারণ জনগণের জন্য। রেস্ট হাউসের ১১টি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে অতিথিরা রাতযাপন করতে পারেন। এসব কক্ষে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। ভবনটির নির্মাণকাজে ঠিকাদার ছিলেন মেসার্স নূর সিন্ডিকেট-মেসার্স হোসেন এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মনজুর হোসাইন। তিনি বলেন, ভবনের কাজ এক বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় কাজ শেষ করতে প্রায় পাঁচ বছর লেগে যায়। কাজ শেষ করে তাঁরা এটি জেলা পরিষদকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এরপর ২০২৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটি উদ্বোধনও করেন।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ভবনটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ, আসবাব সংযোজনসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ হয়েছে। তবে গ্রন্থাগারে বই সরবরাহ করা হয়নি। জনবল নিয়োগ দিলেই এটি চালু করা যাবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির ইকবাল বলেন, ভবনটির নির্মাণকাজের সবকিছুই হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিমের ইচ্ছেমতো। ভবনটি চালু করতে ৫-৭ জন জনবল দরকার। জনবল নিয়োগের চেষ্টা চলছে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে নোয়াপাড়া কলেজের পাশে নির্মিত হয়েছে ভবনটি। গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, তিনতলা ভবনটির সীমানাপ্রাচীরের মূল ফটকে তালা দেওয়া। ভবনের তদারকিতে কেউ না থাকায় ভেতরে ঢুকে পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। তবে বাইরে থেকে দেখা যায়, ভবনের দোতলায় শেখ কামাল কমপ্লেক্সের নামফলক ভেঙে পড়ে রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্মাণের পর থেকেই ভবনটিতে তালা লাগানো। কখনো কোনো কাজে ব্যবহার করা হয়নি। কেবল লোকদেখানো উদ্বোধন হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, জনগণের কাজে আসবে না এমন প্রকল্পে কোটি টাকার অপচয় করে যৌথভাবে যাঁরা হরিলুট করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা উচিত।
Leave a Reply