মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা ব্যুরো >>> বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের বাধার মুখে পড়ে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের স্ক্রাব ভর্তি ট্রাক আটক করা হয়েছে। এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম কাগজকল খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের স্ক্রাব টাকে ভরে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধার মুখে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গতকাল দুপুরে এই ট্রাক বাধার মুখে পড়ে।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এসময় জড়ো হয়। তারা মিলের মুল্যবান যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য মালামাল নামমাত্র মুল্যের বিক্রির প্রতিবাদ করে। একই সাথে টেন্ডার স্থগীতের দাবি জানায়।ছাত্র প্রতিনিধি মিনহাজ ও সাগর সহ শতাধীক ছাত্র এ আন্দোলনে যোগ দেয়। ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারং নামক প্রতিষ্ঠান খুলনার শেখ বাড়ির মাধ্যমে বিগত সরকারের সময় পায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শেখ বাড়িকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৬৫ কোটি টাকার নামমাত্র মুল্যে কাজ পায় এ প্রতিষ্ঠানটি। অথচ অভিযোগ রয়েছে শতকোটি টাকার নিউজপ্রিন্ট মিলের মালামাল নামমাত্র মুল্যে টেন্ডার পেয়েছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারং নামক প্রতিষ্ঠানটি। এই কোম্পানীকে কাজ পাইয়ে দিতে হবে এমন সিদ্ধান্ত ছিল শেখ বাড়ির। যার জন্য টেন্ডারে অংশ গ্রহণকারীরা বৈধতা দেওয়ার জন্য নামমাত্র ঔই সময় অংশ নেয়। এসব বিষয়ে ৫ আগস্টের পর আন্দোলনে নামে স্থানীয় জনগন ও নিউজপ্রিন্ট মিল চাকুরীচ্যুত শ্রমিক কর্মচারী পরিষদ। কিন্তু অভিযোগ ওঠে তারা পড়ে চেপে গিয়েছে। এ সুযোগে মিলের এমডি ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজসে মিলের মালামাল বের করার সিদ্ধান্ত নেয়।এ মালামাল নেওয়ার বিষয়টি ছাত্ররা জানতে পেরে তারা ট্রাক আটকে দেয়। এদিকে ছাত্রদের ভেতরে কয়েকজন মিলের ভেতরে প্রবেশ করে বলে স্থানীয় সুত্রে জানাযায়।তবে তারা শান্তি পুর্ন ভাবে আন্দোলন করে। এ ব্যাপারে নিউজপ্রিন্ট মিল চাকুরী চ্যুত শ্রমিক কর্মচারী পরিষদের আহবায়ক বারেক হাওলাদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে এ টেন্ডার ব্যাস্তবায়ন হয়। এজন্য আমরা আন্দোলন করেছি। হাজার কোটি মুল্যের মালামাল নামমাত্র মুল্যে বিক্রি করে দেয় ঔই চক্রটি।সুবিধা নিয়ে ঔই চক্র সেই টেন্ডার বহাল রেখেছে। যার জন্য হতাশার জায়গা থেকে এ আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি পুনরায় ওপেন টেন্ডারের দাবি জানান। এদিকে ছাত্ররা মালামাল আটকে দিলে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে আসেন। ছাত্ররা ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এ সময় মিলের অভ্যন্তরে শান্তিপুর্ন ভাবে অবস্থান করে। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা একটি ট্রাকে মালামাল ভর্তি করা হয়েছে মর্মে ট্রাকটিকে ছেড়ে দিতে বললে ছাত্রদের জোর আপত্তিতে মালামাল মিলে রেখে ট্রাকটি চলে যায়। ছাত্ররা আইন শৃংখলা নিয়জিত বাহিনীকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় বিগত সরকারের আমলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ টেন্ডার অল্প টাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কে পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। ছাত্ররা এ টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় টেন্ডারের দাবি জানান। এ ব্যাপারে নিউজপ্রিন্ট মিলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদের সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে টেন্ডারের তিনটি কমিটি করা হয়। শেষ টেন্ডার কমিটিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ( কুয়েট), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, গনপুর্ত, শিপইয়ার্ড ও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট, বিসিআইসি প্রধান কার্যালয়ের প্রতিনিধি সহ ১৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তৎকালীন শিল্লমন্ত্রী নুরুল মজিদ সুজন ৫ টি সুপারিশ পাঠালেও আমি ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে কর্মসম্পাদন করি। তিনি আরো বলেন টেন্ডারে যা দর ছিল তা থেকে আরো ৭% বেশি পেয়েছি এবং টেন্ডারে শর্ত থাকে দর দাতাকে ভ্যাটও ট্যাক্স নিজেকে বহন করতে হবে। তৎকালীন সময়ে ভ্যাট ও ট্যাক্স ১৭ % ছিল যা এখন ২৫% এ দাড়িয়েছে। কি কারনে মিলের মালামাল বিক্রি করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্স ( এপিআই) ইউরোপিয়ান মেশিন দিয়ে প্রায় ৩৭ কোটি টাকার বিনিময়ে এ ফ্যাক্টরী করা হবে। ২৪ বছর মিল বন্ধ। কারখানার বয়স ৭৫ বছর। এদিকে মিলের এমডি আবু সাঈদকে বিগত সরকারের সময়ে কোটি টাকার বিনিময়ে টেন্ডার পাইয়ে দেবার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সঠিক না ভুল তথ্য। এখানে ওষুধ তৈরীর কাঁচামাল উৎপাদনের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেজন্য মিলের মালামাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় বিগত সরকার। তিনি আরো বলেন, গতকাল দুপুরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্ক্রাপ নিতে ট্রাক ভেতরে নিয়ে আসে। তারা মালামাল লোড করে। এমন সময় বৈষম্য বিরোধী ৪০/৫০ জন ছাত্র জড়ো হয়। তারা ৫ আগষ্টের আগে এ টেন্ডার হওয়া নিয়ে সচ্ছতা তুলেছে। তারা উপদেষ্টার সাথে কথা বলেছে।তারা টেন্ডারের বিষয়টি সচ্ছতা আনার চেষ্টা করছে।তবে মন্ত্রণালয় বা উপর মহল থেকে মালামাল না নেওয়ার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই।তিনি ছাত্রদের সাথে বিরোধে যাবেন না।তিনি তাদের কাগজপত্র দেখাবেন। তার পর ছাত্ররা কি সিদ্ধান্ত নেয় তা কতৃপক্ষকে জানাবো। কতৃপক্ষ যা জানাবেন সে অনুযায়ী কাজ হবে বলে জানান তিনি। এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারং এর প্রতিনিধি মো: শাহনেওয়াজ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন নিউজপ্রিন্ট মিলের এমডির সাথে কথা বলতে। এর বেশি তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। এব্যাপারে খালিশপুর থানা অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্ররা দাবি করেছে যেহেতু এই টেন্ডারটা দলীয় সরকারের অধিনে হয়েছে। তাই সচ্ছতা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছে। তারা এ টেন্ডারের সচ্ছতা দেখতে চাই অথবা এ টেন্ডার বাতিলের দাবি জানিয়েছে।এ সমস্যা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মিল হতে কোন মালামাল বের না হয় এটাই দাবি ছাত্রদের। তবে তারা শান্তিপুর্ন অবস্থান করেছে বলে তিনি জানান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মিল কতৃপক্ষ যৌথ বাহিনীর সাথে বসার কথা রয়েছে। তার পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়ত ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক হবার পরে সিদ্ধান্ত জানা যেতে পারে।
Leave a Reply