এস. এ. নয়ন, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধ: বাজারের বর্জ্যে দখল দূষণে বিপন্ন ইছামতি নদী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসদরে রোয়াজারহাট বাজার এলাকায় ইছমতি নদীর পাড় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বাজারের সব ময়লা নদীর পাড়ের ফেলায় দূষণ ও দখলে চলে যাচ্ছে নদীটি। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে ময়লা ভাগাড়ে পরিণত হলেও নজর নেই পৌরসভা কর্তৃপক্ষের। রবিবার (৩০ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার রোয়াজারহাট বাজার ঘেঁষে যাওয়া ইছামতী নদীর উপরের ব্রিজের নিচে তৈরি হয়েছে ময়লার ভাগাড়। বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবী, বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো ডাস্টবিন নেই। যার ফলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েই নদীর তীরে ফেলছেন। এর পাশে গরু-ছাগলের হাটও বসে। ফলে এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে এসব ময়লা-আবর্জনা পানিতে মিশে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি ও পরিবেশ। পথচারী মো. আলাউর মিয়া চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘এসব ময়লার কারণে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিগত তিনবছর বিভিন্ন সময় জাতীয় ও স্থানীয় পত্রপত্রিকায় এর খবর প্রকাশ হলেও কোনো লাভ হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, কাপ্তাই সড়কের ওপরে সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘ বাজার হলো এটি। এখানে ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভা কর্তৃক ডাস্টবিন দেওয়া দরকার।’ রোয়াজারহাট বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা চাটগাঁর সংবাদকে জানান, ‘পৌরসভার নিয়োজিত সুইপাররা বাজারের বর্জ্য পরিস্কার করে তা আবার ফেলছে পাশের ইছামতি নদীতে। নদীতে অবাধে বর্জ্য ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে নদী, বর্জ্যের গন্ধে সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ। ড্রেনে বর্জ্য ফেলার কারণে বৃষ্টি হলেই পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। মাছ ও মাংসের বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। এখানেও ময়লার স্তুপ। সাপ্তাহিক শুক্রবার ও সোমবারের বাজারে দুর্গন্ধের জন্য পণ্য বিক্রি করতে অসুবিধা হয়।’ ব্যবসায়ী আহমেদ শফি চাটগাঁর সংবাদকে বলেন , ‘এত সুন্দর একটা নদীর পাড়। দেখার মতো একটা পরিবেশ হয়েছে রোয়াজারহাটের ইছামতি নদীর ঘাট। কিন্তু ময়লার ভাগাড়ের জন্য পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বিকেলে সময় কাটাতে প্রতিদিন এই ঘাটে আসি। রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনার স্তূপ আর দুর্গন্ধে মনটাই খারাপ হয়ে যায়। পৌর কর্তৃপক্ষ একটু নজর দিলেই এলাকা আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে যাবে।’ পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, ‘রোয়াজারহাট ইছামতি নদীর পাশেই মাছের বাজার, মুরগীর বাজার, গরুর বাজার ও পাইকারি বাজার। অথচ এসব বাজারে কোনো সচেতনতা মূলক সাইনবোর্ড নেই। নদীর আশেপাশের সবজি বাগানের সব ময়লা ফেলা হচ্ছে সরাসরি নদীতে।’ ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে নদী, খাল, পুকুর ভরাট ও দূষণ করা যাবে না, এমনকি শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বলেও উল্লেখ রয়েছে। একইভাবে ২০১৩ সালের পানি অধিকার আইনেও বলা হয়েছে- পানি নিস্কাশনে বাধা দেওয়া যাবে না বা দূষণ করা যাবে না। এ ছাড়া ২০০০ সালের জলাধার আইনেও নদীর শ্রেণি পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. কফিল উদ্দিন সিকদার চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ী আশপাশের মানুষকে নদীতে ময়লা ফেলতে নিষেধ করে আসছি। কিন্তু পৌরসভা এলাকার ময়লাগুলো নদীর পাড়ে ফেলতে হয়। এক্ষেত্রে জনগণকেও সচেতন হতে হবে। ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়ে আগামী আলোচনা সভায় পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরগণ বসে সিদ্বান্ত নেব। যাতে নদীর পাড়ে আর কেউ ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ময়লার ভাগাড়ে যেন কেউ পরিণত করতে না পারে।’ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব চৌধুরী চাটগাঁর সংবাদকে বলেন, ‘ইছামতি নদীর বিষয়ে আমরা নদী রক্ষা কমিশনকে জানিয়েছি। এক্ষেত্রে নদী ও পরিবেশ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’