ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক >>> "চাঁদাবাজি,দখল বাজি,সংঘাত, সহিংসতায় বিশ্বাসী নয় আমরা।এই বাংলায় নতুন করে কোন ফ্যাসিজমের উত্থান চাইনা।আমরা সকল নাগরিকের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই।নিরাপদ আবাস চাই।নিরাপদ বিচরণ চাই।আর কোন মায়ের বুক খালী হোক,তা চাই না।কোন ভেদাভেদ চাই না।ধর্ম যার-যার, বাংলাদেশ আমাদের সবার,এমন মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা আমাদের দেশে মেজরিটি মাইনরিটি একেবারেই মানিনা। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছেন, তারা এদেশের মর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক। ইসলাম কারো উপর জোর খাটানোর কোনো অধিকার রাখেনা। অন্য ধর্মও কোনো ধর্মের উপর জোর খাটাতে পারবেনা, যদি সেটি ধর্ম হয়ে থাকে।শনিবার সকালে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হওয়া জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।শাফিকুর রহমান বলেন, সমাজের মধ্যে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়েছিলো। এখানে মেজরিটি মাইনরিটি বলে যুগ-যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মের ভাই বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের সম্পদ গ্রাস করা হয়েছে, জায়গা জমি দখল করা হয়েছে , ইজ্জতের উপর হাত দেয়া হয়েছিলো, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর দোষ দেয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর উপর।ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোথায় কোথায় জামায়াতের কর্মীরা এসব অপকর্ম করেছে, তা সুস্পষ্ট করে নাম ঠিকানা দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন। আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, ন্যায় বিচার আমরা আপনাদের হাতে তুলে দেবো। আমরা নিশ্চিত এই অপকর্মের সাথে আমাদের সহকর্মীরা জড়িত নয়।২৪ এর অভ্যুত্থানকারী প্রজন্মকে সম্মান জানিয়ে আমির বলেন, তোমাদের নেতৃত্বে আমরা ছিলাম। সাড়ে ১৫ বছর আমরা আমাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি। কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। এটাই সত্য কথা। কিন্তু সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিকতায় তোমাদের নেতৃত্বে জাতি শেষ আঘাতটা ফ্যাসিজমের উপর দিয়েছিলো এবং জাতি সফল হয়েছিলো।আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেকে আবার নিজেরা কৃতিত্ব দাবী করে৷ আমি মাস্টারমাইন্ড, অমুক ভাই মাস্টারমাইন্ড তমুক নেতা মাস্টারমাইন্ড। মহা পরিকল্পনাকারী মহান রাব্বুল আল আমিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড আমরা বিশ্বাস করিনা।ডা. শফিক আরো বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সেভাবে মাথা উঁচু করে দাড়াবো, সেটা ছিলো আমাদের আশা। কিন্তু বাস্তবে সে আশা পূরণ হয়নি। যদি বলি একেবারেই পূরণ হয়নি, তাহলে কথাটা সত্য হবেনা। কিন্তু পূরণ হবার বিশাল প্রত্যাশা মানুষের ছিলো। একটা স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা আমরা এখনো পেলাম না।নিজ দলের প্রতি অবিচারের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতের আমির বলেন, আইনঙ্গনে এসে যারা বে আইনী কর্মকাণ্ড করেছেন, প্রধান বিচারপতির দরজায় এসে লাথি দিয়েছিলো, আওয়ামীলীগ তাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বানিয়েছিলেন। এদের কাছ থেকে বিচার পাওয়া যাবেনা এটাই স্বাভাবিক। তাই অবিচারের শিকার হয়ে আমাদের ১১ জন কলিজার টুকরা শীর্ষ নেতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনা, তবে আমরা অবশ্যই অপকর্মের বিচার চাই। আমাদের কথা স্পষ্ট। সবগুলো খুনের বিচার হতে হবে। বিশেষ করে ২৪ এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। আগে বিচার তারপর অন্য কাজ। এ বিচার না হলে শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে।এছাড়া সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনেজির আহমেদের বক্তব্য প্রসঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ” পুলিশ ভাইদের বলছি বেনজিরের ফাঁদে পা দিবেন না।শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৯টার কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কক্সবাজার জেলা শাখার আয়োজনে এ সম্মেলন শুরু হয়।সম্মেলনে কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ নুর মোহাম্মদ আনোয়ারি সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগর আমীর শাহজাহান চৌধুরীসহ দলের শীর্ষ নেতারা।দীর্ঘদিন পর এতোবড় আয়োজন পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছেন দলটির নেতা কর্মীরা। কর্মী সম্মেলন ঘিরে রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণে সেজেছে পুরো কক্সবাজার শহর।জনলোকারণ্যে পরিণত সব সড়ক। নারায়ে তাকবির আল্লাহ আকবর ধ্বনীতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে জেলার সর্বত্র।লাখো জনতার ইসলামী ভুমিতে ছেয়ে যায় সবখানে।