মোঃ ইনামুল হক, রংপুর
বনভোজনে যাওয়ার পথে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থীদের বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় শোকে বিহ্বল নিহত মুবতাছিন রহমানের (মাহিন) পরিবার। তাঁর বাবা ইমতিয়াজুর রহমান লাশ আনতে গেছেন। আর দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নাজমুন্নাহার।
মুবতাছিনের বাড়ি রংপুর নগরের জুম্মাপাড়ায়। শনিবার ২৩ নভেম্বর সকালে শ্রীপুরে বনভোজনের দ্বিতল বাসে প্রথম বিদ্যুতায়িত হন মাহিন। বন্ধুকে ছটফট করতে দেখে ছুটে যান জোবায়ের আলম (সাকিব)। পরে দুজনেই মারা যান। দুর্ঘটনায় তাঁদের আরেক বন্ধু মীর মোজাম্মেল নাঈমও (২৩) মারা যান। তাঁরা সবাই তগাজীপুরের আইইউটির মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
রাত নয়টা দিকে নগরের জুম্মাপাড়ায় মাহিনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা শোকার্ত। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাহিনের বাবা ব্যাংক কর্মকর্তা। মা গৃহিণী। মাহিনের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া একটা ছোট ভাই আছে। মাহিন প্রথম শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেছেন।
মাহিনের চাচা হাসানুর রহমান (৪৮) অভিযোগ করেন, এটা দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তায় বিদ্যুতের তার ঝুলে আছে। কিন্তু পিডিবির কেউ জানে না। এটা কেউ বিশ্বাস করবে? আমরা সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠিয়েছি। তাঁকে লাশ হয়ে ফিরে আসতে হবে কেন? এত বড় একটা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রদের যারা নিয়ে যাচ্ছিল, তাদের দেখা দরকার ছিল তার ঝুলে ছিল। মানুষের অবহেলায় প্রাণ ঝরে গেছে। ওদের বিচার করা উচিত।’
হাসানুর রহমান ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, বাড়ির দ্বিতীয় তলায় মাহিনের মা নাজমুন্নাহার আছেন। বিকেলে ছেলের দুর্ঘটনার খবর জানানো হলে শোকে ভেঙে পড়েন। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।মাহিনের বাবা ইমতিয়াজুর রহমান দুপুরে চারজন আত্মীয়কে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে মাহিনের লাশ আনতে গেছেন।
মাহিনের এমন মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর মামা কলেজ শিক্ষক জিকরুল ইসলাম চাটগাঁ সংবাদ কে বলেন ‘আমরা এত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছি, যাতে আমাদের সন্তানেরা ভালোভাবে ও নিরাপদ থাকে। তারা (বিশ্ববিদ্যালয়) পিকনিকে নিয়ে যাবে, নিরাপত্তা দেখবে না? এটা শুধু এই দেশে সম্ভব। রাস্তায় মৃত্যুফাঁদ (বিদ্যুতের তার) ঝুলে থাকে, এটা দেখার কি কর্তৃপক্ষ নেই?’