শ.ম.গফুর, ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক:
উখিয়ার কুতুপালং গ্রামের ফ্রান্স প্রবাসী জুয়েল বড়ুয়া তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শৈশবের পাঠশালা কুতুপালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে স্কুল ড্রেস উপহার দিয়েছেন।
নতুন ড্রেস পেয়ে উচ্ছাসিত কচি-কাচা শিক্ষার্থীরা।
৩ নভেম্বর সকালে কুতুপালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০ হতদরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে এসব স্কুল ড্রেস উপহার দেন।এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইন্জিনিয়ারি হেলাল উদ্দিন, কুতুপালং সরকারী প্রথামিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান, ফ্রান্স প্রবাসী জুয়েল বড়ুয়ার পিতা সুমত বড়ুয়া,কুতুপালং সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবু সুজন বড়ুয়া,কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ী আবুল ফজল বাবুল,রফিক ও আব্দুর রহিম প্রমুখ।
হেলাল উদ্দিন মেম্বার বলেন, কুতুপালং এলাকার যুবক ফ্রান্স প্রবাসী ছোট ভাই জুয়েল বড়ুয়া কয়েকদিন আগে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে কল দেন, সে বলেন ভাইয়া আমি কুতুপালং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এতিম এবং গরীব ছেলেদের জন্য কিছু করতে চাই।তাদের পাশে থাকতে চাই, তখন আমি বল্লাম হ্যাঁ, এটা ভাল কাজ, তখন সে আমাকে বলে কি করলে ভাল হতে পারে, উত্তরে বল্লাম আমি স্যারের সাথে কথা বলে দেখি কয়জন ছাত্র ছাত্রী হবে। স্যার হাবিবুর রহমান আমাকে বলেন ২০ জন মতো হবে।পরে জুয়েল কে আমি বলি ২০ জনের কথা, সেই আমাকে বলে ঠিক আছে ভাইয়া। আমি তাদের জন্য স্কুল ড্রেস’র সব ড্রেসআপ ক্লিয়ার করে কয়েক দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দিব।যেমন প্রতিশ্রুতি তেমন কাজ বিদ্যালায়ের ২০ জন ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুল ড্রেস ক্লিয়ার করে দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, কুতুপালং এলাকার পশ্চিম পাড়ার সমুত বড়ুয়ার ছেলে ফ্রান্স প্রবাসী জুয়েল বড়ুয়ার সুন্দর মনমানিসতা দেখে আমি মুগ্ধ, তার এই সহযোগিতা, ভালবাসা দেখে আমি মুগ্ধ। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। সেই সাথে আমার বিদ্যালয়ের সাধারণ পরিবারের ২০ জন ছাত্র ছাত্রীদের মূখে হাসি দেখতে পেয়েছি। আশা রাখব নিজ এলাকা কিংবা গ্রামের মানুষের পাশে সর্বদা পাশে থাকার চেষ্টা করবা, যতটুকু সম্ভব হয়।ধন্যবাদ জুয়েল বড়ুয়া।
ফ্রান্স প্রবাসি জুয়েল বড়ুয়ার পিতা সুমুত বড়ুয়া বলেন, আমার ছেলে জুয়েল বড়ুয়া ছোট বেলা থেকে এলাকার মানুষের প্রতি টান ছিল। তার মনমানসিকতা ছিল উদার, যদিও বা তখন তার কিছুই করার সাধ্য ছিল না। এলাকাবাসির দোয়ায় আমার দুই ছেলে বর্তমানে ফ্রান্স প্রবাসী। তারা অন্তত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।আমার ছেলের সুন্দর এ মনমানসিকতা দেখে আমি গর্বিত। ভাল থাকিস বাবা দূর প্রবাসে, তোর জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল।
এ কাজটি করেছি কাউকে দেখানোর জন্য নই, সোস্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার জন্য নই, এমন অনুভুতি জানালেন জুয়েল বড়ুয়া।তিনি বলেন,আমার ছোট বেলা থেকেই শখ ছিল যে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এলাকার মানুষের কল্যাণে ভাল কিছু করার।আমি যখন প্রাইমারিতে পড়ালেখা করতাম, তখন আমার স্কুল ড্রেস ছিলনা,অন্য শার্ট পরিধান করে স্কুলে যেতাম। বন্ধুবান্ধব শিক্ষকরা অনেক সময় অনেক কথা বলতো, তারপরও কিছুই করার ছিল না।, কারণ আমার বাবার তখন আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল ছিলনা। আমাদের পরিবারে আমার বাবা একজনই রোজগার করত। আমার শৈশব সময় টা কেটেছে খুব ই দুঃখ কষ্টের মাঝে।ফ্রান্স প্রবাসী জুয়েল বড়ুয়া বলেন: আজ আমার শখের প্রথমএকটি ইচ্ছে পূরণ হয়েছে, মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি আমার দুই মামা’কে স্বরণ করছি, সেজ মামা সুগত বড়ুয়া এবং ছোট মামা বাবু বড়ুয়া,আমার বড় ভাই রুবেল বড়ুয়া, তাদের সহযোগিতা এবং পিতামাতার আর্শীবাদের কারণেই আমার সফলতা। তবে আমি বলব এই যে আমরা যারা দূর প্রবাসে আছি, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন।আমাদের এলাকার অনেকেই দেশের বাহিরে উন্নত রাষ্ট্রে আছেন,আমরা চাইলে আমাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে কিছু কিছু সাহায্য আমাদের এলাকার উদ্দেশ্য উপহার হিসেবে পাঠাতে পারি।এলাকার অনেক বিদ্যালয় রয়েছে, অনেক কিছু নেই, অন্য এলাকার স্কুলের তুলনাই,তা সরকার করতে একটু সময়ের ব্যাপার রয়েছে।এলাকার অনেক ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে, যেখানে অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।শুধু তাই নই, এলাকার অনেক গরীব পরিবারের মেয়ে বিয়ে দিতে পারছেন না টাকার অভাবে।আমরা যারা বিদেশে আছি, বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রে আছি, আমরা যদি এই সব বিষয়ে অন্তত কিছু সাহায্য করতে পারি, আমাদের জন্য অনেক কিছু।আমার আগামীতে প্রচেষ্টা থাকবে, আমার এলাকার অর্থাৎ কুতুপালং ৯ নং ওয়ার্ডের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করে পাশে থাকবো।
Leave a Reply