আবদুর রাজ্জাক, জেলা প্রতিনিধি,কক্সবাজার।। সীমান্ত জনপদের এক আতংকের আরেক নাম হচ্ছে ডাকাত শাহীন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ সীমান্ত এলাকার লোকজন। তার বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। ফলে বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি ও কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে শাহীনুর রহমান শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীন। খুন, ডাকাতি, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, একচ্ছত্রভাবে গরু ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ, মতের বিরোধ থাকা লোকজনকে এলাকা ছাড়াসহ এমন কোন অবৈধ কাজ নাই সে করে না।
নাইক্ষংছড়ি ও রামু থানা পুলিশের পিসিপিআরের তথ্য
অনুযায়ী একটি দুই নয়। সি,আর ও জি,আর মামলা এবং জিডিসহ প্রায় ১৭ মামলার পলাতক আসাসী ডাকাত শাহীন। তার দুই ডজন মামলার মধ্যে রয়েছে ৯ টি ডাকাতি, ডাকাতি প্রস্তুতি ও ছিনতাই, ৪টি মার্ডার মামলা, দুইটি অস্ত্র মামলা, দুইটি মাদক মামলা এবং বাকীগুলো বিভিন্ন থানায় জিডি হিসেবে রয়েছে।
মামলা গুলো হল-১) বান্দরবান এর নাইক্ষ্যংছড়ি থানার, এফআইআর নং-১০, তারিখ- ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, জি আর নং-২১, তারিখ- ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, সময়- ০৭.৪৫ ঘটিকা যারা 198/19(1) the Arms Act, 18/8,, এজাহারে অভিযুক্ত।
২। বান্দরবান এর নাইক্ষ্যংছড়ি থানার, এফআইআর নং-৯, তারিখ- ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, স্ট্রি আর নং-২০, তারিখ- ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, সময়- ০৭.৩৫ ঘটিকা থাবা 199/402 The Penal Code, 1860,, এজাহারে অভিযুক্ত।
৩। AVS) কক্সবাজার এর রামু খানার, এফআইআর নং-১৬/১৬, তারিখ- ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, সময়- ২৩৩৫ ধারা-৩৯৯/৪০২ পেনাল কোড ১৮৬০,, এজাহারে অভিযুক্ত।
81 কক্সবাজার এব রামু থানার এফআইআর নং-১৮/১৮, তারিখ- ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭, সময়- ২২১৫ ঘটিকা হাবা ১৯৮১) এর ৯(ঘ) ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, এজাহারে অভিযুক্ত
৫) কক্সবাজার এর রামু থানার এফআইআর নং-৪/২৬৩, তারিখ- ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, সময়- ২০৩০ ধারা-৩৯৯/৪০২ পেনাল কোড-১৮৬০,, এজাহারে অভিযুক্ত।
৬। কক্সবাজার এর রামু থানার, এফআইআর নং-৫/২৬৪, তারিখ- ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, সময়- ২২ ৩৫ ধারা ১৯ ১১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন,, এজাহারে অভিযুক্ত।
৭) কক্সবাজার এর রামু ঘানার, এফআইআর নং-৭/২৪২, তারিখ- ০৮ আগস্ট, ২০১৬, সময়- ২৩:৪৫ ধারা-৩৯৯/৪০২ পেনাল কোড-১৮৬০,, এজাহারে অভিযুক্ত।
৮। • কক্সবাজার এর রামু থানার এফআইআর নং-৮/২৪৩, তারিখ- ০৭ আগস্ট, ২০১৬, সময়- ২৩.৫০ ধারা-১১৯৬ ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন,, এজাহারে অভিযুক্ত।
৯) কক্সবাজার এর রামু থানার, এফআইআর নং-৯/১৭৭, তারিখ- ০৮ জুন, ২০১৬, সময়- ১৮:১৫ ধারা-১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৮২/৩৯৫/৩৯৭/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০;, এজাহাবে অভিযুক্ত।
১০। কক্সবাজার এর রামু থানার, এফআইআর নং-২/১৫ (রাম), তারিখ-০১ অক্টোবর, ২০১৫, জি আর নং-২৮০/১৫ (রামু), তারিখ- ০১ অক্টোবর, ২০১৫; সময়- ধারা- ৩৯৯/৪০২ পেনাল কোড-১৮৬০;, এজায়বে অভিযুক্ত।
১১। কক্সবাজার এর রামু খানার, এফআইআর নং-১৫, তারিখ- ১৩ মে, ২০১২, জি আর নং-১৩১/১২ (রাম), তারিখ-১৩ মে, ২০১২: সময়- যারা- ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড-১৮৬০,, এজাহারে অভিযুক্ত।
১২। কক্সবাজার এর রামু থানার এফআইআর নং-১৯/২২০, তারিখ- ১৯ জুলাই ২০১৬, সময়- ১২ ২০ ধারা- ১৯৬ ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন, এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত।
১৩। কক্সবাজার এর রামু থানার এফআইআর নং-১৩, তারিখ- ১২ জানুয়ারি, ২০১৫, জি আর নং-১০, তারিখ- ১২ জানুয়ারি ২০১৫, সময়- ধারা- ৩২৬/১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩৭৯/৩৮০/৫০৬ পেনাল কোড-১৮৬০,, এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত।
১৪। বান্দরবান এর নাইক্ষ্যংছড়ি থানার এফআইআর নং-৬, তারিখ- ১২ মার্চ, ২০১২, জি আর নং-৫৯/১২, তারিখ- ১৩ মার্চ, ২০১২, সময়- ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩৭৯/৩৮০/৩৮৭ পেনাল কোড ১৮৬০।
১৫। কক্সবাজার এর রামু ধানার এফআইআর নং-২০, তারিখ- ১৭ মার্চ, ২০২৩, জি আর নং-১১৩, তারিখ- ১৭ মার্চ, ২০২৩, সময়- ০০ ৩০ ঘটিকা ধারা 102/34 The Penal Code, 1860,, এই মামলায় সে মামলায় তদন্তে সন্দিগ্ধ আসামি।
১৬। কক্সবাজার এর রামু যানার এফস্পাইসার নং ২১, অনিখ ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, জি আর নং-২১, তারিখ- ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, সময়: ০০ ১০ ঘটিকা যারা 143/341/323/325/307/379/506(2)/34 The Penal Code, 1860,, এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত।
১৭। বান্দরবান এর নাইক্ষ্যংছড়ি থানার এফআইআর নং ২. আরিখ ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি আর নং ১০৩, তারিখ- ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, সময় ২০৪০ ঘটিকা যারা 143/114/447/448/323/307/354/435/436/379/380/506/34 The Penal Code, 1860,, এই মামলায় সে এজাহারে অভিযুক্ত আসামী।
শাহীনুর রহমান শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীন হচ্ছে মূলত ধনীর ঘরের দুলাল। কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়ার জমিদার হাজী ইসলামের সন্তান সে। বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিলো সন্তান বড় হয়ে গর্জনিয়ার হাল ধরবে। হাল ধরেছে ঠিকই, তবে তা সমাজসেবা বা এলাকার মানুষের কল্যাণে নয়। একের পর খুন, ডাকাতি, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, একচ্ছত্রভাবে গরু, মাদক ও সিগারেট পাচার নিয়ন্ত্রণ, মতের বিরোধ থাকা লোকজনকে এলাকা ছাড়াসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে নাইক্ষংছড়ি ও রামু সীমান্তের জনপদে মধ্যে।
গর্জনিয়ায় পৃথক পুলিশ ফাঁড়ি, বিজিবি ক্যাম্প থাকলেও সেখানে আইন চলে শাহীনের। বলা চলে শাহীনের হাতে স্বাধীন দেশের পরাধীন এক ভূখন্ড রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি। শুনতে বাড়িয়ে বলা মনে হলেও তার অপরাধের চিত্র এতটাই ভয়ংকর যে আধুনিক এই সময়ে যা মানুষের কল্পনাকেও হার মানায়।
শাহীনের হাতে খুনের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিনিয়ত, প্রকাশ্যে করা খুনের তথ্য এলাকাবাসী জানলেও সীমান্তে লোকচক্ষুর আড়ালে তৈরী করা মৃত্যুপুরীর পরিসংখ্যান থেকে যাচ্ছে আড়ালে। যুবক, বৃদ্ধ, নারী এমনকি পেটের অনাগত সন্তানও রেহায় পায়নি শাহীনের হাত থেকে।
শাহীনের অপরাধের ফিরিস্তি তুলে ধরার আগে জানা দরকার সে এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠার গল্প:
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, পড়াশোনার জন্য পরিবার থেকে শাহীনকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে পাঠালেও সেদিকে মন না দিয়ে চলে আসেন গ্রামে। অপরাধ জগতে পা দেয় ঈদগড়ের ভয়ংকর ডাকাত কালু, কলিমুল্লাহসহ কয়েকজনের হাত ধরে। শুরুতে ঈদগড় ঈদগাও সড়কে ডাকাতি করতে গিয়ে আটক হয়ে জেলে যায় শাহীন। সেখান থেকেই ঘুরে যায় জীবন। সন্ত্রাসীদের অনুসারী থেকে হয়ে উঠে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান। ২০১২ সালে সন্ত্রাস জগতে পা রাখা শাহীন এখন সীমান্তের অপরাধ জগতের ঢন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এলাকার এক ব্যক্তি জানায়, কয়েকবার ডাকাতি করার পর একটি মামলায় কারাগারে যায় শাহীন। কারাগারে তার সাথে পরিচয় ঘটে মহেশখালীর জলদস্যু, অস্ত্রের কারিগর, চকরিয়ার ডাকাত, উখিয়ার টেকনাফের ইয়াবা কারবারি এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসীদের সাথে। শাহীন কারাগার থেকে বের হওয়ার পর একে একে জামিনে বের করে আনেন বিভিন্ন এলাকার দাগী অপরাধীদের।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনে বের করে গড়ে তুলেন অপরাধের বিশাল সাম্রাজ্য। সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের ছত্রছায়ায় শুরুতে জমি দখল, ডাকাতি এবং অস্ত্র কারবার চালালে সে। ফলে এমপি সাপোর্টে থাকায় ২০২২ সালের পর থেকে আরো রমরমা হয়ে উঠে তার অপরাধ কর্মকান্ড। গর্জনিয়া সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে গরু পাচার শুরু হওয়ার পর থেকে শাহীনও নিজেকে আবিস্কার করেন ভিন্নভাবে।
এ ব্যাপারে নাইক্ষংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো:- মাসরুরুল হক জানান, শাহীন ডাকাতকে গ্রেফতারের জন্য ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় অভিযোগ চালানো হয়েছে এবং যেকোনো মূল্যে শাহীন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয় বলে তিনি জানান ।
Leave a Reply