মোঃইনামুল হক, রংপুর প্রতিনিধি >>> এমন একটি মুহূর্তের জন্যই যেন যুগ যুগ ধরে অপেক্ষায় ছিলেন তিস্তা পাড়ের পানির ন্যায্য অধিকারবঞ্চিত লাখ লাখ মানুষ। ভারতের পানি আগ্রাসনে নির্যাতিত তিস্তা পাড়ের মানুষ ধৈর্য্যহারা হয়ে এখন যে কোনোভাবে এ বিপদ থেকে মুক্তি চায়।সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তিস্তা পাড়ের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবং তাদের ন্যায্য পানির অধিকার আদায়ের ব্যপারে দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির স্থাপন করে তিস্তাবাসীদের পাশে কাণ্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।ভারতের অপ্রতিবেশিসুলভ আচরণ ও তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে বিএনপির গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরবঙ্গের ৮টি জেলায় ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ নামে দু’দিনব্যাপী যে কর্মসূচি পালন করেছে তা লাখ লাখ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি, সমর্থন ও সহযোগিতায় দারুণভাবে সফল হয়েছে। তিস্তার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে এ মুহূর্তে এরকম একটি কর্মসূচির আয়োজন করাটা ছিল বিএনপির জন্য খুবই যথার্থ এবং সময়োপযোগী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর জন্য দারুণভাবে প্রশংসার দাবিদার বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।বিএনপির ডাকে এ আয়োজনে যে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছিল সেখানে শুধু বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ছাড়াও তিস্তা পাড়ের সর্বস্তরের শ্রেণীপেষার মানুষও স্বতস্ফুর্ত অংশ নিয়েছিলেন যাদের অনেকেই ছিলেন যারা রাজনীতি বোঝেন না, বিএনপি বেঝানে না, শুধু বোঝেন নিজের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। দেশপ্রেমের টানে ভারতের আধিপত্যবাদ ও পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দারুণভাবে সাহসের সাথে এবার রুখে দাঁড়িয়েছেন তিস্তা পাড়ের লাখ লাখ মানুষ।তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটিসহ বিভিন্ন স্থানীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা ও উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত প্রসংশনীয় ও চোখে পড়ার মতো। ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তিস্তা পাড়ের লাখ লাখ মানুষের স্বতঃর্স্ফূত অংশগ্রহণ মনে করিয়ে দিচ্ছিলো এটা যেন ভারতের বিরুদ্ধে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ১৯৭৬ সালের মে মাসে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে লাখ লাখ মানুষের যে লংমার্চ হয়েছিল ঠিক তারই প্রতিধ্বনী।সবাইকে নিয়ে এক অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্যমতের নজির সৃষ্টি হলো এবার তিস্তা পাড়ে। তিস্তা পাড়ের লাখ লাখ মানুষ এ প্রতিবাদী সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন শুধু তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য অধিকার আদায়ে নয়, পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভারতের অব্যাহত অপ্রতিবেশিমূলক নিষ্ঠুর আচরণ, সীমান্ত হত্যা, বিএসএফের বাড়াবাড়ি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসম গোপন চুক্তি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপসহ বিভিন্নমুখী ভারতীয় আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাতে।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতের আধিপত্যবাদমুখী আচরণের সবচেয়ে বেশি শিকার হন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার জনগণ, যে কারণে ভারতের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের মাত্রাটাও অনেক বেশি। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের কোটি কোটি মানুষের মনের ক্ষোভ ও আশা আকাক্সক্ষাকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পেরে ঠিক যেন তাদের মনের কথাগুলোই সমাপনী বক্তব্যে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমান। তার এ জোরালো ও তেজদ্বীপ্ত ভাষণ দারুণভাবে উজ্জ্বীবিত ও আশান্বিত করেছে দেশের সকল শ্রেণিপেশার কোটি কোটি মানুষকে।১৮ ফেব্রুয়ারি এ কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে তারেক রহমান অত্যন্ত কঠোর ভাষায় সরাসরি ভারতের নাম উল্লেখ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের অপ্রতিবেশিসুলভ আচরণ ও আধিপত্যবাদের তীব্র সমালোচনা করে সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত যদি তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য অধিকারের ব্যাপারে বাংলাদেশের অনুরোধ ও দাবি মেনে না নেয় তাহলে আগামীতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে বিএনপি আর ভারতের দিকে না তাকিয়ে যে কোনো উপায়েই নিজেদের উদ্যোগেই এ তিস্তা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবে। মূলত এ কথাটিই, এ বডি ল্যাঙ্গুয়েজেই তারেক রহমানের মুখ থেকে শোনার অপেক্ষায় ছিলেন দেশের কোটি কোটি মানুষ। পুরো বক্তব্যে তারেক রহমান দেশের স্বার্থে যেভাবে অত্যন্ত কঠোর মনোভাব প্রদর্শনের পাশাপাশি যথেষ্ট ভদ্রভাবে ভারতকে সরাসরি সুষ্পষ্টভাবে তার মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছেন তাতে নতুনকরে আশায় বুক বেঁধেছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।একজন দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতার দেশের স্বার্থে যে ধরনের স্পষ্ট বক্তব্য দেয়া প্রয়োজন, ঠিক সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে তারেক রহমানের এ নীতি নির্ধারণী বক্তব্যে। মূলত যে নীতি-আদর্শ ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীতাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বিএনপির এ ‘তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির আয়োজন সে আদর্শেরই প্রকৃত বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ যে ভারতের আচরণে কত বেশি বিক্ষুব্ধ তার প্রমাণ সামগ্রিকভাবে আবারও দেখা গেল তিস্তা পাড়ে লাখ লাখ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও ভারতের আচরণের প্রতিবাদ করার মাধ্যমে। তারেক রহমানের কঠোর সিদ্ধান্ত ও যে কোনো মূল্যে তিস্তা মহপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণায় এখন প্রায় নিশ্চিত হয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।তাদের আস্থা এখন পুরোপুরিই দেশের এ ভবিষ্যত রাষ্ট্রনায়কের ওপর। তারেক রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী যদি আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিএনপি সরকার গঠন করে এবং তাদের সরকারের অনুরোধে যদি ভারত তিস্তা নদীর পানির ন্যয্য হিস্যা বাংলাদেশেকে না দেয় তাহলে ঐ পরিস্থিতিতে তখন যদি বাংলাদেশ তার নিজস্ব সিদ্ধান্তে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবয়নের উদ্যোগ নেয় তাহলে সেটাই হবে মূলত ভারতের আধিপত্যবাদ ও অপ্রতিবেশিসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের প্রকৃত ও মধুর প্রতিশোধ। তবে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় এমন আশঙ্কা মোটেও অমূলক নয় যে, ভারত হয়তোবা অতি সহজেই তিস্তার ব্যাপারে তাদের আচরণ পরিবর্তন করবে না। যদি এমনটাই হয় সেক্ষেত্রে এ মধুর প্রতিশোধই হবে বাংলাদেশের একমাত্র পন্থা। সেই অপেক্ষায়ই এখন দেশের মানুষ।