আজ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকায় সুন্নি ছাত্র-জনতার সমাবেশে লাখো মানুষের ঢল


ফিলিস্তিনের পক্ষে ‘ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন’ কর্মসূচি

নিউজ ডেস্ক: জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ‘ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন’ কর্মসূচি শেষ করেছেন সুন্নিপন্থিরা। কর্মসূচিতে অংশ নিতে প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল থেকে জড়ো হতে শুরু করেন তারা। সকাল ৯টার আগেই লোকে-লোকারণ্য হয়ে পড়ে ওই এলাকা।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) ভোর থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন সুন্নি ছাত্র-জনতা। এ সময় সবার হাতে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা, কালেমা খচিত পতাকা, গায়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে নানা রকমের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। প্রেস ক্লাব ছাড়াও পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা।

আয়োজকরা জানান, শনিবারের কর্মসূচিতে দেশের শতাধিক দরবারের পীর-মাশায়েক এবং তাদের প্রতিনিধি-ভক্ত ও সুন্নি মুসলমানরা অংশ নেন।

এর আগে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন’ কর্মসূচির ডাক দেয়। কিন্তু সরকারের অনুমতি পাননি তারা। পরে গোপিবাগ মাঠে কর্মসূচি করার ঘোষণা দেওয়া হলেও শুক্রবার গভীর রাতে প্রশাসনের অনুমতি মেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে করার। অবশেষে শনিবার সকালে ‘আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চ’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত হলো ওই কর্মসূচি।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলের চরম বর্বরতা ও নৃশংসতা আর সহ্য করা যায় না। ইসরায়েলের এ বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। বক্তারা বলেন, যতদিন প্রাণ থাকবে, ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে কথা বলা আমরা বন্ধ করবো না।

বক্তারা বলেন, ভারতের মোদি সরকারও দক্ষিণ এশিয়ায় ইসরায়েলি ধাঁচের আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় মুসলিমবিরোধী ও অসাংবিধানিক ওয়াকফ বিল পাস হয়েছে।’ এ ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানান তারা।

ভবিষ্যতেও এ দায়িত্ব পালনে পিছপা হবেন না জানিয়ে বক্তারা জানান, বাংলাদেশের মুসলিম নাগরিক হিসেবে ভারতীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো ঈমানি দায়িত্ব। ভবিষ্যতেও এ দায়িত্ব পালনে পিছপা হবেন না তারা।

দেশের বিভিন্ন স্থানে পবিত্র মাজারে হামলা প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, ৫ আগস্ট থেকে দেশে অসংখ্য মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, যা সুস্পষ্টভাবে জুলুম ও অমানবিক। বক্তারা সতর্ক করেন, ভবিষ্যতে যদি কোনো মাজারে হামলা হয়, তাহলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিরোধ করা হবে। একইসঙ্গে, ভারতে মুসলিমদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে হামলা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সমাবেশ থেকে আয়োজকরা ছয়টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো— জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে; ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের যত কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সকল কিছুর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সরাসরি হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে যত হত্যা হয়েছে সকল হত্যাকাণ্ড ও হামলার তদন্তপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে; ইন্ডিয়ার লোকসভায় পাস হ‌ওয়া অসাংবিধানিক ও মুসলিমবিরোধী ওয়াকফ বিল লোকসভায় বাতিল ঘোষণা করতে হবে; ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মাজারে যত হামলা, অগ্নিসংযোগ হয়েছে সবগুলো ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া, সমাবেশ থেকে তিনটি অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়। সেগুলো হলো— ইসরায়েল ও ইন্ডিয়াসহ সকল প্রকার বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা জারি রাখবো; পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগসহ সকল প্রকার দেশীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রাখবো এবং বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও গোষ্ঠী স্বার্থে যেকোনো সময় যেকোনো মূল্যে আমরা ময়দানে নামতে প্রস্তুত থাকবো, ইনশাআল্লাহ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর