আজ ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের মিছিল, প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ


এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থনে গত শুক্রবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভের ডাক দেয় সিএমপি কার্যালয় ঘেরাও করেছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে হামলা চালিয়ে গণহত্যা এবং নির্যাতনের অপরাধে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবিও জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।

১৯ অক্টোবর শনিবার বিকেল ৩টা থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের খন্ড খন্ড মিছিল নগরের প্রেস ক্লাব চত্বরে সমবেত হয়ে বিশাল ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪টার দিকে ছাত্রদের এ বিক্ষোভ সমাবেশ প্রেস ক্লাব চত্বর ছাড়িয়ে জামালখান, চেরাগী মোড় এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে বিশাল সমাবেশে রুপ নেয়। এতে অংশ নেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।

প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্ররা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে নগরের লালখান বাজারের দিকে রওনা দেয়। এসময় চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে গভীর রাতে শেখ হাসিনার সমর্থনে মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ওই সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হলে পাঁচলাইশ, চকবাজার ও কোতোয়ালী তিন থানার ওসিসহ সিএমপি কমিশনারের পদত্যাগের দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ছাত্র–জনতার ওপর হামলা চালিয়ে গণহত্যার অপরাধে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ তাদের সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ সমাবেশে ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন ভারতে’, ‘খুনি হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

এখনো শহীদের রক্তের দাগ শুকায়নি উল্লেখ করে বিক্ষোভে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, যে চট্টগ্রামের মাটিতে শহীদ ওয়াসিম, শহীদ শান্ত এবং শহীদ হৃদয় তারুয়ার রক্ত লেগে আছে সেই রাজপথে তারা স্লোগান দেওয়ার মত দুঃসাহস দেখিয়েছে। আমরা মনে করি এখানে প্রশাসনের ব্যর্থতা রয়েছে। রাফি বলেন, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, আমাদের ভাই–বোনদের হত্যা করেছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি তারা এখনো অবাধে ঘোরাফেরা করছে। তারা হাইকোর্টে খুনি হাসিনার পক্ষে স্লোগান দেয়। রাতের আঁধারে ছাত্রলীগ খুনি হাসিনার জন্য স্লোগান দেয়। তারা ভেবেছিল আমরা ঘুমাইয়া গেছি, তারা বোঝেনি আমরা তাদের গর্ত থেকে বের হওয়ার সুযোগ দিয়েছি। আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই– যারা জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের কোনোভাবে ছাড় দেয়া হবে না। প্রশাসনের প্রতি আমাদের দাবি থাকবে দ্রুত সময়ের মধ্যে যারা সন্ত্রাসী, জুলাই অভ্যুত্থানে হামলায় সরাসরি জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে যথাযথ শাস্তি দিতে হবে।

এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ২০–৩০ জন তরুণ নগরের জামালখান এলাকায় কয়েক মিনিটের ঝটিকা মিছিল করে দ্রুত সটকে পড়েন। এরকম কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, মিছিলের অগ্রভাগে মোটরসাইকেল যোগে কয়েকজন তরুণ ছিলেন। যাদের মুখ মুখোশ দিয়ে ঢাকা ছিল। মিছিলে ‘শেখ হাসিনার ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দেন তারা। এরপর দ্রুতই তারা ওই স্থান ত্যাগ করে চলে যান। মিছিলের পর পর ঘটনাস্থলে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা শনিবার বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয়।

আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের আরেক সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, যারা এ দেশের ছাত্র–জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়েছে, খুন করেছে, গুম করেছে তাদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। চকবাজার, কোতোয়ালী এবং পাঁচলাইশ থানার ওসিসহ সিএমপি কমিশনারকে আল্টিমেটাম দিয়ে রাসেল বলেন, এখন পর্যন্ত আপনারা ছাত্রলীগ–যুবলীগের খুনি–সন্ত্রাসীদের পুলিশ আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারেননি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করতে হবে। যদি তা না হয় আমরা আগামীকাল (রোববার) কঠোর কর্মসূচি দেব।

জানা যায়, ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলের প্রতিবাদে নগরের মোড়ে মোড়ে বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনসহ অন্যান্যরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এই ঘটনার পর কোতোয়ালী থানা পুলিশ চারজনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে তিনজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ছাত্রলীগের চোরাগুপ্তা ঝঠিকা মিছিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগের নামে ২০/৩০ জন যুবক হঠাৎ করে  মিছিল করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ছটকে পড়ে, খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এদের একজনের অস্ত্র হাতে ছবিও রয়েছে। একজনের ব্যাপারে যাচাই–বাছাই চলছে। দুস্কৃতিকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি। গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে পাঁচলাইশ থানা এবং ১ জনকে চকবাজার থানা গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ২০–২৫ জন তরুণ নগরের জামালখান এলাকায় কয়েক মিনিটের ঝটিকা মিছিল করে সটকে পড়েন। এরকম কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আদতে এরা কারা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর