আবদুর রাজ্জাক,জেলা প্রতিনিধি,কক্সবাজার ।। গর্জনিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের অঘোষিত সম্রাট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর এমপি কমলের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান যুবলীগ নেতা শাহীনুর রহমান শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীন ও জামসেদের নিয়ন্ত্রণে চলে সীমান্ত চোরাচালান । তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সীমান্ত এলাকার লোকজন। তার বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। ফলে বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি ও কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেডাকাত শাহীন বাহিনী। ডাকাত শাহীন ও জামসেদের নিয়ন্ত্রণে রামু উপজেলার দুই বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়াসহ পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে আসছে শত শত মিয়ানমারের গরু – মহিষ। যাচ্ছে চাল, ডাল, তেল, ওষুধ ও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী। সীমান্ত লাগোয়া এই জনপদ এখন ইয়াবা, আইস, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট।আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দেওয়া তথ্যানুযায়ী দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী, অস্ত্র কারিগর, অস্ত্র প্রশিক্ষকসহ অপরাধী চক্রের বিচরণ ক্ষেত্র এসব পাহাড়ি জনপদ। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা বিদ্রোহী ও আরাকান আর্মির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে পুরো সীমান্ত এলাকাকে অশান্ত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে তারা। এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছে রামু কচ্ছপিয়ার সন্ত্রাসী জামসেদ ও গর্জনিয়ার ডাকাত সর্দার শাহীন।খুন, অস্ত্র চোরাচালান ও গরু পাচারসহ ৪টি মামলার পলাতক আসামি জামসেদ এবং অপরদিকে ডাকাত শাহীনের বিরুদ্ধে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় রয়েছে ১৭টি মামলা।সর্বশেষ ডাকাত শাহীন ও জামসেদ ভাড়ায় আনা নরসিংদীর সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত বিকচাঁন মিয়া (৩৪)কে সোনাইছড়ি জারুলিয়াছড়ি থেকে গত ২৫ (মঙ্গলবার) ফেব্রুয়ারি রাত অনুমান সাড়ে ১২টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ অস্ত্র ও রাইফেলের গুলিসহ গ্রেপ্তার করে।জানা গেছে, সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য ভাড়ায় আনা হয়েছিল বিকচাঁনকে। এই মামলায় ডাকাত শাহীনসহ অন্তত ৬ জন এবং অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) ভোর ৬টায় নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বামহাতিরছড়া ব্রিজের উপর থেকে ১১টি মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পার করে চোরাই পথে আসা ১১টি বলদ গরু জব্দ করে পুলিশ। এ সময় গরুর সঙ্গে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক ওবাইদুল হক ও জসিম উদ্দিন নামে দুই পাচারকারীসহ ৯ শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে পাচার করে আনা গরুর মালিক জামসেদের নাম। ফলে এই মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে।খুন, অস্ত্র চোরাচালান ও গরু পাচারসহ ৪টি মামলার পলাতক আসামি জামসেদ এবং অপরদিকে ডাকাত শাহীনের বিরুদ্ধে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় রয়েছে ১৭টি মামলা।একাধিক জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের অভিমত পাহাড়ি সীমান্তবর্তী দুর্গম জনপদের ত্রাস হচ্ছে ডাকাত শাহীন ও জামসেদ। তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে সব ধরনের অপরাধ ও অবৈধ বাণিজ্য।সীমান্ত দিয়ে গরু-মহিষ পার করতে কাজ করছে আন্তর্জাতিক মাফিয়া সহ দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। প্রতিদিন গরু পাচার করতে শ্রমিক হিসেবে যারা কাজ করছে সবাই দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত বলে জানা গেছে। আর গরু পাচার করতে তারা ভারী অস্ত্র তুলে দিচ্ছে শিশু-কিশোরদের হাতে। গত বছর ৫ আগস্টে সরকার পতন হলে জোয়ারিয়ানালা ও রশিদ নগর এলাকা হয়ে সড়ক পথে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ গরু-মহিষ পাচারে পাচারকারী পরিবর্তনও হয়। তবে সুবিধাভোগের ক্ষেত্রে সবাই একসাথে কাজ করছে। আগে আওয়ামী লীগের লোকজন নেতৃত্ব দিতেন আর এখন জামায়াত-বিএনপির লোকেরা দিচ্ছেন।
জানা গেছে, সীমান্ত পয়েন্ট হয়ে মিয়ানমার থেকে আসা গরু-মহিষ ও ইয়াবা রামুর কচ্ছপিয়া, উখিয়ার ঘোনা, গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল, ক্যাজরবিল, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন, রশিদনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় মজুত করে পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়।
সীমান্ত এলাকা ঘুরে গবাদি পশু পাচারে সংযুক্ত বেশ কয়েকজনের সাথে সরাসরি কথা হয়। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ভালোবাসা, কম্বনিয়া, তুমব্রু, বামহাতিরছড়া, ফুলতলী, চাকঢালা, লম্বাশিয়া, ভাল্লুকখাইয়া, দৌছড়ি, বাইশফাঁড়ি, আশারতলী, জামছড়ি এবং রামুর হাজিরপাড়া ও মৌলভীরকাটা দিয়েও চোরাই পথে মিয়ানমারের গরু আসছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, চিহ্নিত ১৫ ব্যক্তির নেতৃত্বে দুই শতাধিক চোরাকারবারি, ইয়াবা ব্যবসায়ী, হুন্ডি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ডাকাতি ইত্যাদি অপকর্মের দুই নায়ক শাহীন ডাকাত ও জামসেদ অন্যতম। ট্রাকযোগে এসব গরু পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানকার কিছু লোকের সহায়তায় বেশিরভাগ টাঙ্গাইল ভোয়াপুরের শাহিন, বি. বাড়িয়ার সেন্টু মিয়া এই দুই জনের গরু পাচারে সহায়তা করছে কচ্ছপিয়ার শাকিল মেম্বার ও জোয়ারিয়ানালার শাকিল নামের একজন। আরও যারা গরু পাচারের গডফাদার হিসেবে নাম শোনা গেছে, তারা হলেন— চাকমারকুলের আবু তাহের, উখিয়ার কিং জয়নাল, ঈদগাঁও এলাকার আমান খুশবু, চকরিয়ার রমজান, বাবুল ও আব্দু রহিম, টাঙ্গাইল ভুঞাপুর এলাকার মোহাম্মদ আলম, হারুন, খোকন, টেকনাফের আমিন, ঘুমধুমের মিজান মাস্টার ও কুমিল্লার মিজান।এসব গরু পাচারকারীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে জোয়ারিয়ানালার ডালিম, শুক্কুর, শফিকুর রহমান, নুরুল আবছার, রামু চেরাংঘাটা মোশাররফ ও ইউনুস, কাউয়ারখোপের বাবু, খোকন, সুজন, রাকিব, হাসান, বহু মামলার আসামি মোশাররফ, আব্দুল্লাহ, আজিম, সোহেল, যুবদল নেতা জহির, বহু মামলার আসামি রুবেল, হাসান, শানু, ইকবাল, সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী শাকিল, রশিদনগর এলাকার ডাকাত সাদ্দাম, ডাকাত মোস্তাক, তৈয়ব উল্লাহ, কৃষকদল নেতা আবছার, শাহাবুদ্দিন, ইসলাম, খরুলিয়া মিজানসহ আরও বেশ কয়েকজন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আগে আলীকদম ও লামা পথে বার্মিজ গরু মিয়ানমার থেকে পাচার হলেও বর্তমানে চোরাই গরু পাচারকারীরা তাদের পথ পাল্টে বেছে নিয়েছে নতুন পথ। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ির সদর ও বাইশারী ইউনিয়নের বিভিন্ন পথে অবাধে গরু পাচার করে আসছে। রামুর কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়া এলাকা ও সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় মিয়ানমার থেকে আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দিয়ে প্রতিদিন প্রবেশ করছে শত শত গরু-মহিষ। দুই উপজেলায় এই পাচার চক্রের সাথে জড়িত অনেকেই গত এক বছরে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ চক্র এতটাই শক্তিশালী যে, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরও হামলা চালাতে পিছপা হয় না। এমনই এক ঘটনায় গত বছরের এপ্রিল মাসে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি।
Leave a Reply